পারভেজ বাবুল:
শিশুদের কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়! তারপর যায় স্কুলে। স্কুলে গিয়ে ঝিমায়। শিক্ষকের পড়া ছাত্রছাত্রীদের মাথার উপর দিয়ে যায়, কানে ঢোকে না; ঘুম ঘুম চোখে পড়া মনেও ঢোকে না!
শিশুদের শরীরের ওজন যতোটুকু তার চেয়ে বেশি ওজন তাদের বইয়ের ব্যাগের। পিঠের ওপরে পাঁচ দশ কেজি ওজনের বইয়ের ব্যাগ! মনে হয় যেনো সেই বিশাল বইয়ের ব্যাগ বহন করেই ছাত্রছাত্রীরা পন্ডিত হয়ে যাবে! আদতে কিছুই হয় না!
সন্তানের জিপিএ ফাইভ– মাবাবাদের প্রেস্টিজ ঈস্যু! সন্তান জিপিএ ফাইভ না পেলে মাবাবার যেনো ইজ্জত চলে যায়! তাই ছলে বলে কৌশলে, টাকা দিয়ে হলেও জিপিএ ফাইভ লাগবেই! জিপিএ ফাইভ না পেলে মানুষকে মুখ দেখানো যাবে না! সন্তানকে সুসন্তান বানানোর লক্ষ্য নেই, লক্ষ্যটা জিপিএ ফাইভ!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় নব্বই শতাংশ অকৃতকার্য! নব্বই শতাংশ! জিপিএ ফাইভ পেয়ে নব্বই শতাংশ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও খুশি হতাম ভালো লাগতো।
একটা গল্প মনে পড়লো। এসএসসি পরীক্ষার আগে টেষ্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য এক ছেলে শ্রেণি শিক্ষককে জিগগেস করলো, স্যার, আমি আনএলাও / Unallow কেনো? শিক্ষক রেগে বললেন, ওই জন্যেই তুই ডিজএলাও/ Disallow!
আমরা জিপিএ ফাইভের প্রতিযোগিতা করতে করতে, মরিয়া হতে হতে সন্তানদের “আনএলাও” বানাচ্ছি! আমরা কতোজন মাবাবা সন্তানদের বলি, শিক্ষকদের ভক্তি শ্রদ্ধা করবে, সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে। মনে রাখবে, ছাত্রনং অধ্যায়ন তপ:।
অর্থাৎ অধ্যায়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। সন্তানকে মুরুব্বীদের, বড়দের সম্মান করার কথা বলতে আমরা ভুলেই গেছি ইত্যাদি ইত্যাদি। সেসব কারণে সন্তান এখন মাবাবাকে পিটায়, খুন করে, শিক্ষকদেরও পিটায়, খুন করে!
অতএব, বিষয়গুলো ভাবতে হবে, এবং বুকে হাত দিয়ে বলতে হবে– আমরা ঘরে ঘরে জিপিএ ফাইভ চাই না, ঘরে ঘরে সুসন্তান চাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী সভ্য ভদ্র বিনয়ী ছাত্র ছাত্রী চাই।
আশুলিয়ায় শিক্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনায় কাকে দায়ী করবো? শিক্ষককে জুতোর মালা গলায় পরানোর ঘটনায় কাকে দায়ী করবো? দায়ী আমরা অভিভাবক, দায়ী আমাদের অশিক্ষা কুশিক্ষা, চিন্তার দৈন্যতা। জীবনমুখী শিক্ষার অভাব, শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি।
তাই আসুন আমরা মাবাবা অভিভাবক আগে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হই, তারপর সন্তানদের সুশিক্ষিত সুসন্তান বানাই। গাছের গোড়ায় পচন ধরেছে, তাই গাছের মাথায় পানি ঢেলে লাভ নেই। সুতরাং গাছের গোড়া ঠিক না করলে আমরা শেষ! ভবিষ্যৎ ঘুটঘুটে অন্ধকার!
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, জনসংযোগ ও কমিউন্স কনসালটেন্ট, রেডিও গল্পকার ও পরিবেশ কর্মী