ফারজানা রহমান, এ্যানি:
আমাকে কেউ যদি কখনও জিজ্ঞাসা করে তোমার দেখা সেরা শহরের নাম কি ? আমি নিঃশ্বাস নেওয়ার আগেই বলে দিবো , আমার প্রাণের শহর রাজশাহী।
অনেকের কাছে বাহুল্য মনে হতে পারে। কিন্তু আমার মত যাদের জীবন এই শহরের পরতে পরতে মিশে আছে ,তারা কোন চিন্তা না করেই আমার সাথে সহমত প্রকাশ করবেন এটা আমি নিশ্চিত।
অনেকের মতে ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। কিন্তু সত্যিটা হলো , ভালোবাসার চোখ বড়ই নিষ্ঠুর! ভালোবাসা মানুষকে সূক্ষ ভাবে বিচার বিবেচনা করতে শেখায়,আলোর পথে নিয়ে যায়।
যেখানে এসব থাকে না সেটা বিভ্রান্তি, ভালোবাসা নই। আমার প্রথম ভালোবাসা নাম রাজশাহী শহর।এ কারণেই বলতে পারি যে, আমার বেড়ে উঠার প্রথম পাঠ রাজশাহী কলেজে। সেটাও ঐ শহরে।
নারী হিসাবে প্রথম আত্মপ্রকাশ সেটাও রাজশাহীতে। এই স্বল্প জীবন প্রবাহের প্রথম ভালোবাসা, জননী হওয়া,একজন কর্মদক্ষ মানুষ হিসাবে আত্মপরিচয় সেটাও এই রাজশাহী শহরে।
আমার সকল সোনালী দিনের একমাত্র রাজ্বস্বাক্ষী রাজশাহী শহর, তাই আমার ভাললাগার আর ভালোবাসার শহর রাজশাহী।
আমরা সবাই এক বাক্যে মেনে নেই, জীবনে স্মৃতি কাতর সময় হচ্ছে কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়। সে ক্ষেত্রেও আমাকে রাজশাহী আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।
রাজশাহী কলেজ জীবনের পরের জীবন হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মতিহার চত্বর। যেখানে কিনা শুধু মাত্র প্যারিস রোডে হাঁটলেই মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য!আমি দাবি নিয়ে বলতে পারি, আপনার মন ভাল নেই?
সুযোগ করে চলে যান মমতাজ উদ্দীন কলা ভবনের ইব্লিশ চত্বরের পুকুর পাড়ের শামীম ভাই এর চার দোকানে। শামীম ভাই এর হাতে বানানো এক কাপ চা নিয়ে বসে পড়ুন পুকুর পাড়ের তালতলায় আথবা বেঞ্চে, দেখবেন মন আপনার ফুরফুরে মেজাজ ফিরে এসেছে
মন ভাল করার এর থেকে ভাল টনিক আজ অব্দি আর আমার জানা নেই। কাজের জন্য যত বার আমার রাজশাহী শহরে থাকা হয়েছে ,আমি ছুতো খুঁজে বারবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছি। খুঁজে ফিরেছি আমার ভালোবাসার মানুষদের স্মৃতি কথা।
আমি যখন চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করি, তখনই আমার মন জুড়ে থাকে রাজশাহী শহর প্রতিটি অলিগলি, রাস্তা আর আমার প্রিয় পদ্মার পাড়।
একটা নদী কেন্দ্রীক শহর মানুষকে কিভাবে এক সূত্রে বেঁধে রেখেছে সেটা দেখতে চাইলেও আপনাকে রাজশাহী শহরে যেতে হবে। সকাল বেলা বিশুদ্ধ বাতাস আর হাসিখুশি হাটন্ত মানুষের মেলা বসে এখানে প্রতিদিন ।
আপনি অল্প সময়ের জন্য রাজশাহী গেছেন অথচ সময় না থাকার জন্য অধিকাংশ প্রিয় মানুষদের সাথে দেখা করা সম্ভব নয়। সহজ সমাধান ,চলে যান সকালে পদ্মার পাড়ে। অনেকের সাথেই দেখা হয়ে যেতে পারে, অত্যন্ত আমি এটার ফল পেয়েছি।
আর আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ,টি বাঁধ। অসাধারণ, মায়ামাখা আর ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় যেখানে। যারা টি বাঁধে গেছেন ,তারা এর মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারবেন নিশ্চয়।
একটু সময় হাতে নিয়ে বিকেল হতে হতেই চলে যাবেন । পা ছড়িয়ে বসে পড়ুন বাঁধানো বাঁধে।যদি প্রিয়জনকে সাথে রাখতে পারেন তবে তো কথাই আলাদা!
খেতে পারেন খুব মজার, বিভিন্ন আচার মিশানো মজাদার পেয়ারা মাখানো। কাজের জন্য আমার বাংলাদেশের ৫৯ জেলা দেখা হয়েছে কিন্তু এমন স্বাদযুক্ত পেয়ারা মাখানো কোথায় পাইনি!
আর একটু সময় থাকলে নৌকা ভ্রমন করতে পারেন স্বল্প খরচে। নৌকা ভ্রমন এবং সূর্য অস্ত একটা অসাধারণ ছবি। মাত্র কয়েক দিন আগে রাজশাহী কলেজের ‘৯০ ব্যাচ প্রাণের বন্ধুদের সাথে মনখুলে উপভোগ করার সুযোগ হয়েছিল আমার, নিশ্চয় তোমাদের মনে আছে বন্ধুরা?
এখন জীবিকার প্রয়োজনে ব্যস্ত নগরী ঢাকায় বসবাস করলেও বারবার অবসর খুঁজে ফিরি কখন আবারো এক ছুটে পৌঁছোবো আমার প্রাণের শহর রাজশাহীতে… খুব ভাল থাকুক আমার প্রাণের শহর রাজশাহী।
লেখক: কবি, কথা সাহিত্যিক ও উন্নয়ন কর্মী