দেবযানী ঘোষ:
আজ ৩রা মে। গতকাল ছিল বাংলার চলচ্চিত্র ও সাহিত্য জগতের মহান কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায় এর ১০১ তম জন্মদিবস। একাধারে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক , লেখক ও চিত্রকর। প্রায় ৪২ বছরের কর্মজীবনে অসামান্য সব সৃষ্টি ও পুরষ্কারের ইতিহাস আমাদের অহংকার।
মহান নির্মাতা ও বাংলার মহা নায়কের যুগলবন্দীর এক অতুলনীয় সৃষ্টি “”” নায়ক “”” চলচ্চিত্র। কিন্তু দুই মহান শিল্পীর মিলনে আমরা মাত্র দুটি কাজ পেয়েছি।
অপরটি “””চিড়িয়াখানা “”। এ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “”” নায়ক’-এর গল্প আমি লিখি উত্তমকুমারের কথা ভেবেই।
সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের এক অভিনয়-পাগল যুবক ছবিতে নেমে তরতরিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এই যুবকের মনে কী ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে, তার মূল্যবোধে কী পরিবর্তন হতে পারে, এও ছিল গল্পের বিষয়।
চিত্রনাট্য শুনে উত্তম খুশি হয়। তার একটা কারণ হতে পারে তার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে কাহিনির সাদৃশ্য। আলোচনা করার পর সে পুরো চরিত্র টিকে আপন করে নিয়েছিল।তাকে আগেও বলে রেখেছিলাম যে, সে যে ধরনের প্রেমের গল্পে অভিনয় করতে অভ্যস্ত, এটা সে ধরনের গল্প নয়। সুতরাং তাকে গতানুগতিক পথ কিছুটা ছাড়তে হবে। এতে যে প্রেম আছে, তা প্রচ্ছন্ন।
এতে নায়কের দোষ-গুণ দুই আছে, এবং তা যে শুধু অন্তরে তা নয়। তাকে বললাম যে তোমার গালে যে সাম্প্রতিক পানবসন্তের দাগগুলি রয়েছে, সেগুলি ক্যামেরায় বোঝা যাবে, কারণ তোমাকে মেকআপ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।”””
এরপর ও তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, উত্তমকুমার এর মতো প্রতিভার সদ্ব্যবহার আমাদের চলচ্চিত্রে হয় নি। “”নায়কের “” একটি দৃশ্যেও তার কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি। আমাদের সমাজের কিছু বিশিষ্ট উন্নাসিক বুদ্ধিজীবী মানুষ আছেন যারা স্টার নাম শুনলেই যেন নাক সিঁটকোন। তাদের জন্য উত্তম এক উদাহরণ।
তিনি আরও বলেন যখন কোনো উচ্চমানের পরিচালক ও অভিনেতা মিলে কোনো চরিত্র নির্মাণ করেন সেখানে কার দক্ষতা কতখানি তা পরিস্ফুট হয় না। কিন্তু যখন কোন মধ্যম মানের পরিচালনায় ও অভিনেতা নিজস্বতা ফুটিয়ে তুলতে পারে সে অবশ্যই একজন দক্ষ শিল্পী। উত্তমকুমার তাঁর চলনে বলনে এক নিজস্ব গ্রহনযোগ্যতা তৈরী করেছিলেন যা খুবই দুষ্প্রাপ্য।
আমাদের চিরকালীন আক্ষেপ থেকে গেছে যে আমরা এই দুই কিংবদন্তির একসাথে করা কাজ হারিয়েছি। মিলন সঠিক সময়ে হলে হয়তো আরও কিছু মহামূল্যবান শিল্প ও সৃষ্টি আমাদের ভান্ডারে থেকে যেতো সম্পদ হয়ে।
আজকের দিনে সত্যজিৎ রায় কে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তিনি চিরদিন বাঙালীর মনের মণিকোঠায় ঊজ্জ্বল থাকুন এই প্রার্থনা🙏।
লেখকঃ কথা সাহিত্যিক, গায়িকা ও শিক্ষিকা