More

    আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী: বাঙালীর মহানায়ক

    ১৯২৫ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজে থেকে রসায়নে প্রথম বিভাগ পেয়েছিলেন ড. কুদরতে খুদা। একজন মুসলমান হয়ে প্রথম বিভাগ পাবে এটা বহু শিক্ষক এর বিরোধিতা করেছিলো। কিন্তু শত বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রফুল্লচন্দ্র বলেছিলেন, যে যোগ্য সে অবশ্যই পাবে। ওর মেধার পরিচয় ওর খাতায়, ধর্মে নয় মোটেই। মেধার নির্ণায়ক কখনো ধর্ম হতে পারে না।

    প্রভাতী বার্তাকক্ষ:

    বাংলায় বিজ্ঞান চর্চাকে গণ মানুষের কাতারে‌ পৌঁছে দেওয়া আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী। ২ রা আগষ্ট, ১৮৬১ সালে অবিভক্ত যশোরের পাইকগাছায় জন্মগ্রহন করেন।

    ‘আমার সমস্ত কিছুর কেন্দ্রবিন্দুই এদেশের মানুষ ভালো থাকবে বলে।’

    – আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়

    ১৮৯২ সালে কলকাতায় উপমহাদেশের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ৭০০ টাকা বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠা করে গড়ে তুলেছিলেন। বর্তমান খুলনা টেক্সটাইল মিলসও তাঁর হাতে তৈরি প্রতিষ্ঠান।

    আজীবন বাঙ্গালী তরুণদের আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় চাকরি না করে ব্যবসা বলতেন। তিনি আরও বলতেন, একটা সমগ্র জাতি শুধুমাত্র কেরানী হয়ে টিকে থাকতে পারে না কোনভাবেই।

    উপমহাদেশে যে এতো উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী গড়ে উঠেছে তাঁর ভূমিকা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। উপমহাদেশের সমবায় ব্যবসায়েরও পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছিলেন তিনি।

    মানবতাবাদী ১৯২২ সালে ভয়াবহ বন্যায় সমগ্র বাংলা ঘুরে ঘুরে অর্থসংগ্রহ এবং ত্রাণকার্য করেছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ।

    তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কলেজে বিজ্ঞান ক্লাসে ইংরেজিতে পাঠদান দিতেন শিক্ষকেরা অথচ ক্লাসে বাংলায় পাঠদান দিতেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ।

    আজীবন বিজ্ঞান দিয়ে মূল্যায়ন করতেন, ছিলেন প্রচন্ড অসাম্প্রদায়িক আর বলতেন সবার আগে মানুষ, তারপর মানুষের ধর্ম।

    ১৯২৫ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজে থেকে রসায়নে প্রথম বিভাগ পেয়েছিলেন ড. কুদরতে খুদা। একজন মুসলমান হয়ে প্রথম বিভাগ পাবে এটা বহু শিক্ষক এর বিরোধিতা করেছিলো। কিন্তু শত বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রফুল্লচন্দ্র বলেছিলেন, যে যোগ্য সে অবশ্যই পাবে। ওর মেধার পরিচয় ওর খাতায়, ধর্মে নয় মোটেই। মেধার নির্ণায়ক কখনো ধর্ম হতে পারে না।
    .
    আজীবন চলতেন মানবিক ও যুক্তি

    আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় একবার রসায়ন ক্লাসে এক ছাত্র হাড় দিয়ে তান্ত্রিক সাধনার কথা বললে ছাত্রদের সামনে এক টুকরো হাড় হাতে নিয়ে বুনসেন বার্নারে পুড়িয়ে মুখে পুরে দিয়েছিলেন। যুক্তি দিয়ে বললেন, এটা ক্যালসিয়াম ফসফেট, এটা কোন প্রাণীর হাড় তা-ও আর চেনার যাবে না।

    রসায়ন দিয়ে শুধু রসায়ন শিক্ষাই নয়, ছাত্রদের মনে ধর্মান্ধতার মূল উপড়ে ফেলতে সচেষ্ট ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। দেশসেবাই ছিল তার মূল মন্ত্র।

    সারাবিশ্বে আলোড়িত মারকিউরাস নাইট্রাইড (HgNO2) এর আবিস্কারক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। এছাড়াও ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টারের আবিস্কারক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

    কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের দোতলার দক্ষিণ-পশ্চিম কোনের একটি অতি সাধারণ কক্ষে থাকতেন, ছিল না বিলাসিতা। আসবাবপত্রের মধ্যে ছিলো একটি খাটিয়া, দুটি চেয়ার, ছোট একটি খাবার টেবিল, একটি পড়ার টেবিল ও জামাকাপড় রাখার একটি সস্তা আলনা, এটাতেই তার জীবন পার করে দিয়েছিলেন।

    অথচ তখনকার সময়ের মাসিক আয় হাজার টাকার উপরে, মোট আয় থেকে নিজের জন্য মাত্র ৪০ টাকা রেখে বাকি সব দান করে দিতেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

    ১৯২৬ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার বেশী দান করেছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

    শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ৫-৬ দিন ক্লাসে না আসায় একদিন বিকেলে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তাঁর বাসায় গিয়ে দেখেন শেরে বাংলা তখনও খেলার মাঠে আছে। ফিরে এসে স্যারকে দেখে তিনি কতক্ষণে এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, তোমাদের হিসেবে এক ঘন্টা আর আমার হিসেবে ষাট মিনিট অপেক্ষা করছেন।

    বৃটিশ গোয়েন্দা দপ্তরে ‘বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী’ হিসেবে চিহিৃত করা হয় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়’কে।

    স্বদেশি আন্দোলনের প্রথম পর্যায় থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ১৯০৫ এ বঙ্গভঙ্গের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন গোপনে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য বিপ্লবীদের অর্থ সাহায্য করতেন আচার্য।
    .
    সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার ভারতের অবস্থা জানার জন্য ইংল্যান্ডে সাইমন কমিশন গঠন করে। লন্ডনেই তাঁরা কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নাম শুনেছেন। তাঁরা বিজ্ঞান কলেজ পরিদর্শনে আসতে চাইলেন।

    একদিন দুপুরের দিকে কমিশনের সদস্যরা বিজ্ঞান কলেজে এলে দেখেন গামছা পরে ধুতিখানা রোদে শুকাচ্ছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ঘরে ঢুকে দেখেন এক কোণে স্টোভে রান্না হচ্ছিল অন্যদিকে সাদামাটা একটা খাট আছে।

    ঘরের অবস্থা দেখে মানুষ নাকি দেবতা এ মন্তব্য করেছিলেন প্রতিনিধি দল।

    “সংসারে জ্ঞানী তপস্বী দুর্লভ নয়, কিন্তু মানুষের মনের মধ্যে চরিত্রে ক্রিয়া প্রভাবে তাকে ক্রিয়াবান করতে পারে এমন মনীষী সংসারে কদাচ দেখতে পাওয়া যায়।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ৭০তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই মঞ্চেই প্রফুল্লচন্দ্র রায় ‘পূরবী’, ‘বলাকা’, ‘কথা ও কাহিনী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে অসংখ্য কবিতা পাঠ করেছিলেন। সম্পূর্ণ নিজের স্মৃতি থেকে মুখস্থ বলেছিলেন আচার্য।

    “যেসব জন্ম সাহিত্যিক গোলমেলে ল্যাবরেটরির মধ্যে ঢুকে পড়ে জাত খুইয়ে বৈজ্ঞানিকের হাটে হারিয়ে গিয়েছেন তাঁদের ফের জাতে তুলবো।”-মজা করে পরে লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গীতকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আচার্য আর রবীন্দ্রনাথ নিজেও তো বিজ্ঞানের সমাদর করতে অবহেলা করেননি কখনও।

    আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় একাধারে ছিলেন একজন কবি, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিখ্যাত কবিতা রবি- প্রয়াণ লিখেছিলেন আচার্য।

    তাঁর জগদ্বিখ্যাত ছাত্র হলেন- সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, নীলরতন ধর, পুলিন বিহারী সরকার, রসিকলাল দত্ত, মেঘনাদ সাহা, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও বিজ্ঞানী কুদরত-ই খুদা।

    বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই মহামানবের প্রতি যিনি বাংলাকে এগিয়ে দিয়ে গেছেন তার মেধা দিয়ে। প্রভাতী সংবাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img