মহসীন কবির কাজল:
ইকবাল হঠাৎ করে জানালো পাশপোর্টের মেয়াদ না থাকায় ভারতের ভিসা সে ২রা নভেম্বরের মধ্যে করতে পারছে না। ইতিমধ্যে ২রা নভেম্বরকে কেন্দ্র করে আমার ও মিলনের সমস্ত ভ্রমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে।
ব্যাংকের ছুটি রিসিডিউল করার সুযোগ নেই। আপাতত ইকবালকে পরামর্শ দিলাম তার ভ্রমণ এক সপ্তাহর জন্য পিছিয়ে আমাদের সাথে কাশ্মীর ট্যুরে যোগদানের জন্য। সেও রাজি হয়ে গেল।
ডেট লাইন ঃ ২ নভেম্বর,১৭, ১ম দিন স্থান : ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়াপোর্ট, দিল্লী, সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:০০
আমাদের ভ্রমণের স্টাটিং পয়েন্ট এবং সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু ঠিক করা হলো দিল্লীকে। মিলন এই সময়কে সামনে রেখে ১লা নভেম্বর রওনা দিল জাপান থেকে।
সে চায়নাতে বার ঘন্টার যাত্রা বিরতি দিয়ে দিল্লী আসবে। আমি ২রা নভেম্বর সকাল ১১:০০ টায় বিমানযোগে রওনা দিয়ে কলকাতা হয়ে দিল্লী পৌছাব বিকাল ৫:০০ টায়।
এবং ইকবাল ১০ই নভেম্বর দিল্লী এয়ারপোর্টে আমাদের সাথে যোগ দিবে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি ভ্রমণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ইউ এস বাংলার সকাল ১১:০০ টার ফ্লাইট ধরে নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোস ইন্টারন্যাশনাল এয়াপোর্টে পৌছালাম দুপুর ১২:০০ টায়।কলকাতায় বিমান থেকে নেমে যখন ইমিগ্রেশনে দাড়ালাম। আমার চক্ষু চড়ক গাছ!!!!
কোলকাতা বিমান বন্দরে ইমিগ্রেসনে বিশাল কিউ।এখন বাজে দুপুর সাড়ে বারটা, মাত্র দেড় ঘণ্টা পরে আমার দিল্লীর কানেক্টিং ফ্লাইট। আমি প্রায় ১০০ জনের পিছনে লাইনে দাড়িয়ে আছি।
প্রতি যাত্রী ছাড়তে অফিসারের ৩ মিনিট করে লাগছে। এইভাবে চলতে থাকলে আমার দিল্লীর ফ্লাইট নির্ঘাত মিস। কি করব বুজতে পারছি না।কিংকর্তব্যবিমুঢ়!!!
এর মাজে আধা ঘণ্টা চলে গেছে। সাহস করে একেবারে সামনে চলে গেলাম। যথারীতি গার্ড ধরে বসলো। কানেক্টিং ফ্লাইটের কথা বলাতে ছেড়ে দিল।
ইমিগ্রেশন দ্রুত শেষ করে যখন বের হলাম, তখন হাতে ৪৫ মিনিট। চেক ইন একটু পরে করার সিদ্ধান্ত নিলাম। মোবাইল রিচার্জ করে যখন দিল্লীর ফ্লাইট ধরতে গেলাম, তখন বাজে বেলা ১:৩০।
আমি হতবাগাই লাস্ট পেসেঞ্জার। ভারতে প্রায় এক ঘণ্টা আগে বোর্ডিং হয়ে যায়। যাক অবশেষে ফ্লাইটে উঠে বসলাম।পাশেই বসলো এক শিক। ইয়া লম্বা বড় বড় দাড়ি মোচ।সহযাত্রী হিসাবে দু একটা কথা বলতে চাইলাম। শালা যেন বোবা। তাকায়ও না কথাও কয় না।
একটা বোরিং জার্নি শেষে বিকাল ৫:০০টার মধ্যেই দিল্লীতে পৌছে গেলাম। ডমেস্টিক টার্মিনালে নামলাম। নভেম্বরে ঢাকায় শীতর প্রকোপ দেখা না গেলেও দিল্লীতে প্রচণ্ড শীত।
ভারতে আমি বহুবার এলেও দিল্লীর বিমান বন্দরটি আমার কাছে পুরোটাই অচেনা। যেতে হবে ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালে।১০ মিনিট হেটেই পৌছে গেলাম। মিলন ল্যান্ড করবে সন্ধে সাতটায়।
হাতে সময় দুই ঘন্টা।বসে আছি একা একা তার অপেক্ষায়। মিলনের সাথে বহুবছর দেখা হয় না । তার চেহারা কেমন হয়েছে?কে জানে? উপরোন্ত তার মোবাইলও বন্ধ। আমার ভারতীয় মোবাইল নম্বর দেয়া আছে।
কিন্তু সে কোন যোগাযোগ করছে না। আমিও যোগাযোগ করার কোন মাধ্যম খুঁজে পাচ্ছি না। সব গুলো গেটের দিকে তিক্ষ নযর রাখছি। প্রায় দুই ঘন্টা হতে চলল মিলনের কোন খবর নাই।
কেএফসি তে বসে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম।আবার ফিরে আসলাম লবিতে। এ আনজান শহরের আনজান বিমান বন্দরে কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। খুব অসহায় বোধ করছিলাম । সেই সাথে কাজ করছিল অজানা ভয়। হাতে দুটো বড় বড় লাগেজ। এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত হেঁটে বেড়াচ্ছি।
মিলনের দেখা পাচ্ছি না। হোটেলে কল করলাম। খবর নাই। সিদ্ধান্ত নিলাম একাই হোটেলে ফিরে যাব। হঠাৎ রাত আটটার দিকে পেছন থেকে, কে যেন বলে উঠল ঐ বেডা?? আমি চমকে পিছনে তাকালাম!
চলবে……
ভবঘুরে মন
লেখক: কবি, সাহিত্যিক ও ব্যাংকার