মহসীন কবির কাজলঃ
সিমলা মানালীর যাবার পথে ছোট বড় বহু পাহাড়। আমা দের গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎ এক পাহাড়ের তলদেশে এক গুহার মধ্যে প্রবেশ করল। না, আসলে এটা কোন গুহা টুহা কিছু নয়, প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা একটি টানেল।
এ টানেল জালারি পাস নামে খ্যাত। দুপুর বারটার ফকফকে রোদ টানেলের ভিতর পরিনত হল রাতে। অদ্ভুত সুন্দর টানেলটি। কিছু দূর পর পর ল্যাম্প পোষ্ট।
সারি সারি গাড়ি ছুটে চলেছে টানেলের ভিতর দিয়ে।মাত্র তিন মিনিটেই বেরিয়ে গেলাম টানেল থেকে। আবার দিনের ফকফকা আলো।
ড্রাইভার মুকেশের কাছ থেকে জানা গেল, এই টানেলটি মানালী পথ৷ প্রায় ৫০ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছে। কুলু যাবার পথের পাহাড় লেক বেস্টিত মনোমুগ্ধকর সুনসান রাস্তা মিলন আর আমার মন কেড়ে নিয়েছে।
বিকাল তিনটা নাগাদ আমরা পৌছে গেলাম কুলুতে। মানালি কুলু জেলার একটি থানা। এক সুন্দর স্পটে যাত্রা বিরতি করলাম। জায়গাটি মূলত একটি রিসোর্ট।
পাশেই কুলকুল করে বয়ে চলেছে খরস্রোতা বিয়াস নদী। চারিদিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পুরো নদীতে সাদা সাদা পাথর। এই নদীতে বোট রাফটিং করার সাধ জাগলো দুই বন্ধুর মনে।
কিন্তু রাফটিং-এ যেতে হলে আমাদের পাসপোর্ট , যাবতীয় রুপি ডলার মালপত্র সব কিছুই গাড়ীতে রেখে যেতে হবে। যেখান থেকে রাফটিং শুরু হবে তা স্পট থেকে ৫ কিঃমিঃ দুরে।
মনে অজানা শংকা। যদি ড্রাইভার সমস্ত কিছু নিয়ে চম্পট দেয়! তখন এই হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি ছাড়া আর কিছুই থাকবে না কপালে । কিন্তু‘ মনে এ্যাডভেঞ্চার করার তীব্র ইচ্ছা।
এই রাইডের দুজনের প্যকেজ মুল্য হাকল ৪০০০ রুপি। পুরো প্রোগ্রামটি তারা ভিডিও করে দেবে। সব কিছু ভুলে দুজনেই রাজী হয়ে গেলাম।
মহসিন কাজল। লক্ষীপুরের সন্তান। লেখাপড়ার শুরু চট্রগাম শাহিন স্কুল থেকে এসএসসি পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা থেকে এইসএসসি এবং সবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণ-যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েছেন। বর্তমানে পেশায় ব্যাংকার। পর্যটক হিসাবে ঘুরে বেড়ানো তার নেশা। এর পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি ইন্ডিয়া ভ্রমণ করে এসে প্রভাতী সংবাদের পাঠকদের জন্য “জিন্দেগী না মেলে দোবারা” নামে লিখেছেন তার ভ্রমণ কাহিনী। সর্বমোট ২৬ পর্বে তিনি এই ভ্রমণ কাহিনি শেষ করেছেন। আজ এর ৭ম পর্ব।
শুধু শর্টস ও গেঞ্জি পরে উঠে পড়লাম ভ্যান গাড়িতে দশ মিনিট চলার পর নদীর ঘাটে আমাদের নামিয়ে দেয়া হল।এরপর লাইফ জ্যাকেট পরে বিয়াস নদীতে বোটে উঠে পড়লাম রাফটিংয়ের জন্য।
ঠান্ডা শিতল পানি। প্রচন্ড শীত। পুরো রাইডিংটি ভিডিও করা হচ্ছিল। প্রথম প্রথম খুব ভয় ভয় লাগছিল। আমরা দুজনেই বৈঠা চালনায় অভিজ্ঞ নই ।
দুজনে দুইটা বৈঠা চালিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি।পাথরের গায়ে মাজে মাজে ধাক্কা খেয়ে বোট কেপে উঠছিল । পাথরের সাথে বহমান নদীর গর্জনের তুমুল শব্দ।
সাথে প্রচন্ড গতিতে বাতাস। হঠাৎ মাজ নদীতে এসেই আমার ইচ্ছে হলো বিয়াস নদীতে অবগাহনের। মিলনকে বলায় সে রাজি হলো না।ইভেন্টের লোকজন আমাকে সতর্ক করল হিম শীতল জলের বিষয়ে। কিন্তু‘ আমি নাছোড়বান্ধা। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
দিলাম ঝাপ। ওহো!!! বরফের মত শীতল পানি! সাতার কাটার চেষ্টা করলাম। পারালাম না। নদীতে দুই মিনিটও টেকা গেল না। মনে হলো আমার সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে।
মিলন রাগী রাগী চেহারায় নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। মিলনকে বললাম দোস্ত আমাকে টেনে তোল। ঐ বেটার দয়া হল না।
ফাইজলামী করে বলল নামতে গেলি ক্যান? এখন তুলুম না। ঐ শালা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর আমি নদীতে তলিয়ে যাচ্ছি!!!!!”
চলবে…………..