More

    মেঘের দেশে সাজেক ভ্যালি ভ্রমন

    ফারজানা রহমান, এ্যানিঃ

    রাঙামাটির ছাদ বলে পরিচিত ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি নামে পরিচিত উপত্যকা মূলত দুই টি গ্রাম জুড়ে অবস্থিত। রুইলুই (১৭২০ ফুট উচ্চতায়) এবং কংলাক পাড়া (১৮০০ ফুট উচ্চতায়) কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে এই সাজেক ভ্যালি।

    রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উত্তরের বাঘাইছড়ি উপজেলার অবস্থিত ত্রিপুরা, লুসাই আর অল্প কিছু চাকমা আদিবাসীদের বসবাস এই সাজেক ভ্যালিতে। প্রধান ভাষা ত্রিপুরা। তবে এরা পর্যটকদের সাথে বাংলা ভাষার কথা বলে।

    সমতল থেকে অনেক উঁচুতে বসবাস করায় এরা খুবই পরিশ্রমী। এই এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা নির্বাহ হয় পর্যটন কেন্দ্র করে। সাজেক ভ্যালি কে অনেকেই বলে থাকে মেঘের রাজ্য। দূরে ভারতের মিজুরাম ।

    অনেক রাতে সেই আলো দেখে এ দেশে থেকেও স্বপ্ন বুনতে প্রতিনিয়ত এখানকার অধিবাসীরা ছেলে মেয়েদের পড়তে পাঠিয়ে দেয় মিজুরামে। কারো কারো পরিবারের অনেকেই সেই খানের বাসিন্দা হয়েছে ।

    সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কিছু দিন আগে বিডিআর পরিচালিত একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর লেখাপড়া কিছুটা ঘরের মধ্যে এলেও অধিকাংশকে কে দিঘিনালা অথবা খাগড়াছড়ি সদরে যেতে হয়।

    তবে রাঙামাটি জেলার হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে খাগড়াছড়িতে এই এলাকার মানুষের যাতায়াত বেশি।

    সাজেক ভ্যালি নিয়ন্ত্রণ করে আদিবাসীদের পক্ষে একজন হেডম্যান। আর প্রশাসনিক সব দায়িত্ব সেনাবাহিনীর। এই উপত্যকার জমির মালিকানা মূলত আদিবাসীদের।

    বর্তমানে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাতে বাঙালিরা ৫/৮ বছরের লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছে নানারকম কটেজ। কাঠ আর বাসের তৈরি মনোরম কটেজ গুলো কিছু ক্ষণের জন্য মেঘের রাজ্য হারিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে।

    Image 10000 52
    মেঘের দেশে সাজেক ভ্যালি, খাগড়াছড়ি

    এত উঁচুতে হওয়াতে বৃষ্টির দেখা মেলে যখন তখন। সাজেক ভ্যালিতে পানির যোগান আসে সমতল থেকে। তাই বৃষ্টি এখানে আরাধ্য। বৃষ্টি ছেড়ে যাবার পর যখন রিসোর্টগুলো মেঘে ঢেকে ফেলে তা সত্যি এক অপরূপ অনূভুতি!মনে হবে আপনি মেঘের রাজ্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন।

    শহরের জীবনের একঘেয়েমি থেকে কিছুটা সময় এই মেঘের দেশে বেড়িয়ে আসতে পারেন যে কেউ। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছে। শহরের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একান্ত কিছুটা সময় কাটাতে চাইলে চলে যেতে পারেন এই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ছোট্ট এই রূপ কথার শহরে।

    স্বপ্নের মত রঙ বেরঙের কটেজ গুলোর বারান্দায় বসে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে উপভোগ করতে পারবেন মুগ্ধ করা সকাল। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পাহাড়ের রঙ বদলের খেলা। সঙ্গীকে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে যান কংলাক পাড়াতে।

    মূলত আদিবাসীদের জীবন যাত্রা দেখার সুযোগ এখানেই। যারা নিরিবিলি ভাবে থাকতে চান তারা সাজেক জিরো পয়েন্ট থেকে একটু এগিয়ে মেঘভিউ কটেজের মত কোন একটা কটেজ বেছে নিতে পারেন।

    প্রাকৃতিক পরিবেশে নিরিবিলি সময় কাটাতে এই কটেজ গুলোর কোন বিকল্প নেই। এই এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ না পৌঁছালেও সোলার অথবা জেনারেটরের সাহায্যে আলোর ব্যবস্থা আছে।

    মন ভরে প্রাকৃতিক পরিবেশে নিরিবিলি থাকতে চাইলে এখানে থাকায় ভাল। রুইলুই পাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বলে পুরো পথ পর্যটক গণ হেঁটে যান তবে উন্নয়নের ধারা দেখে মনে হয় আর বেশি দিন লাগবে না এই পাড়া পর্যন্ত আধুনিক বাহন পৌঁছে যেতে।

    সমতল থেকে ঢাল বেয়ে উঠে প্রথমে পরে রুইলুই পাড়া । সাজেক রিসোর্ট চোখে পড়বে ,গোল আকৃতির বলে স্থানীয়রা একে গোল ঘর বলে থাকে। পর্যটন শুরুতে সরকারি ভাবে এই রিসোর্ট তৈরি হয় ।

    অধিকাংশ কটেজ রুইলুই পাড়াতে গড়ে উঠেছে বলে খাবার হোটেল গুলো এই এলাকায় অবস্থিত। খাবার জন্য আপনাকে এই সব হোটেলের উপর নির্ভর করতে হবে।

    খাবার মান হিসাবে দাম আপনার আয়ত্ব্যের মধ্যে থাকবে। তবে এই এলাকায় আদিবাসী খাবার বিশেষ করে বেমবো চিকেন (বাঁশের মধ্যে মুরগি রান্না) এখানকার বিশেষ খাবার।

    তাছাড়া কচি বাশের বিভিন্ন পদ পাবেন তবে তা আগে থেকে আপনাকে বলে রাখতে হবে। রাতের জন্য এখানে প্রায় সব হোটেলে বারবিকিউ এর ব্যবস্থা আছে। আপনি আপনার পছন্দের মত চাইলে খাবার খেতে পারবেন নিশ্চিত ভাবে।

    সাজেকের সকাল দেখতে চাইলে আপনাকে ঘুম কাতুরে হলে একদম চলবে না। কটেজের বারান্দায় বসে দেখতে পারেন। তবে মেঘপুন্জি কটেজের মত ঝুলন্ত বারান্দা পেয়ে গেলে তার মজায় আলাদা।

    অথবা সাজেক ক্লাসিক কটেজে বসে আপনি বিভিন্ন দিক থেকে পাহাড়ের সোনাঝরা সকাল উপভোগ করতে পারবেন। প্রায় প্রত্যেক কটেজের এই ভিউ সম্পূর্ণ রুম গুলোর চাহিদা পর্যটকদের কাছে সব সময় বেশি থাকে। তাই এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে একটু আগে ভাগেই পরিকল্পনা করা ভাল।

    তাছাড়া রুইলুই পাড়া থেকে একটু নেমে আসলে চোখে পড়বে লুসাই গ্রাম। দেখে নিতে পারেন লুসাই আদিবাসীদের জীবন যাত্রার কিছু ছবি।তার জন্য আপনাকে ব্যয় করতে হবে মাত্র ত্রিশ টাকা। সামনে পড়বে হেলিপ্যাড।

    এই হেলিপ্যাড এসে আপনি পেয়ে যাবেন সাজেক জিরো পয়েন্ট। এর কাছ ঘেঁষে নেমে গেছে ঝাড়ভোজ নামে একটি ছোট পর্যটক কেন্দ্র। চাইলে ছোট ছোট ছাওনিতে বসে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে আড্ডা দিতে পারেন অথবা দোলনায় দোল খেতে খেতে দূরে মিজুরামের

    পাহাড় দেখতে দেখতে নির্মল বাসাতে সব অবসাদ দূর করে কিছুটা সময় প্রশান্তি উপভোগ করতে পারবেন। জিরো পয়েন্টে বসে কয়েক জন আদিবাসী বাঁশের পাত্রে করে নানা রকমের চা বিক্রি করে।

    এই এলাকায় এটাও একটা বিশেষ ব্যাপার বাঁশ কেটে ছোট ছোট পাত্র তৈরি করে নানা রকমের চা দেওয়া হয়। সাজেকে গেলে অবশ্যই এটা খেয়ে আসবেন।

    রুইলুই পাড়াতে পা দেওয়া পর সামনে পড়বে কৃত্রিম পাহাড় আর ব্রীজ দিয়ে তৈরি একটা পর্যটন কেন্দ্র।সেনাবাহিনী এটা দেখাশোনা করে। এখানকার দোলনা গুলো পাহাড়ের ঢালে বসানো। তাই দোল খেতে খেতে খুব সহজেই আপনি উপভোগ করতে পারবেন দূরের পাহাড় গুলোর সৌন্দর্য।

    সাজেক রাঙামাটি জেলার হলেও যেতে হয় খাগড়াছড়ি শহর থেকে। প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে হলেও পথে বাঘাইছড়ি রেজিমেন্টের এসকর্ট নিয়ে যেতে হয় ।

    দিনে দুবার সকাল দশটায় এবং দুপুর তিনটার এই এসকর্ট পাওয়া যায়। তাই চাইলেই আপনি যখন তখন সাজেকে ঢুকতে পারবেন না।

    পাহাড়ি পথে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা। পাহাড়ের বুক চিরে একে বেকে ছুটে চলা এই পথে প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।

    ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার অনেক বাস আছে কলাবাগান অথবা আরামবাগ থেকে। রাতের বাসে গেলে ভোরবেলা নেমে যাবেন শাপলা চত্বরে।

    খুব সহজেই পেয়ে যাবেন চাঁদের গাড়ি নামে পাহাড়ি পথে চলা বার অথবা দশ জনের জীপ গাড়ি। যাওয়া আসা চুক্তিতে এরা ভাড়া খাটে। সিএনজি নিয়ে ও যেতে পারেন।

    ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে এই রাস্তায় এই চাঁদের গাড়ি বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে থাকে। পথে যেতে এত বাঁক পরে যে স্থানীয়রা তা জেনেবুঝে গাড়ি চালিয়ে থাকে।

    সাজেক ভ্যালি যেতে চাইলে আপনি পাবেন বিভিন্ন ট্যুর গ্রুপকে। এরা বিভিন্ন সময় প্যাকেজ ট্যুর পরিকল্পনা করে। বাজেটের মধ্যে এই ট্যুর গ্রুপে আপনি যোগ হয়ে যেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

    অথবা দশ বার জন মিলে ছোট দলে বেড়িয়ে পড়তে পারেন সাজেক ভ্যালির উদ্দেশ্যে। তবে শুক্র/শনিবার সাজেক ভ্যালি যেতে চাইলে আগে থেকেই রিসোর্ট নিশ্চিত করতে হবে।

    না হলে ভাল কোন রিসোর্ট পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে। তবে কোন ট্যুর গ্রুপে গেলে এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা আপনাকে। ওদের উপর সব ভার দিয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।

    শহরের ব্যস্ততা থেকে মেঘের রাজ্যে সাজেক ভ্যালি ভ্রমন আপনার জীবন যাত্রার যুক্ত করতে পারে নির্মল ভাললাগা কিছু সুখের স্মৃতি।

    মেঘের ভেলায় ভাসতে ভাসতে না হয় কাটিয়ে দিলেন দুটো দিন। আর এই ভাললাগার এই অনুভূতি আপনাকে ভরিয়ে রাখবে আগামী পথ চলা..

    লেখক: কবি, কথা সাহিত্যিক ও উন্নয়ন কর্মী

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img