মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
টাকা দিতে দেরি হওয়ায় এক প্রসূতির পেটের ভেতর থাকা টিউমার অপসারণ না করেই সেলাই করার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোরের দিকে মানিকগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই নারীর বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের নয়াডিঙ্গি এলাকায়।
ভুক্তভোগী রোগী ও তার স্বজনরা জানান, শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই নারীকে জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রসব যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ২টার দিকে তাকে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। অস্ত্রোপচার করতে আনা হয় ওই শহরের ডক্টরস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. খায়রুল হাসান এবং এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক ডা. আশিককে। গর্ভবতী ওই নারীকে ৪৫ মিনিট পর্যবেক্ষণের পর তারা অস্ত্রোপচার শুরু করেন। একটি সুস্থ কন্যা শিশু প্রসব করেন ওই নারী। এ সময় তার পেটে একটি টিউমার দেখতে পান চিকিৎসক। ৩ হাজার টাকা দিলে টিউমার অপসারণ করবেন বলে রোগীর স্বজনদের জানান চিকিৎসক। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় টিউমার অপসারণ না করেই পেট সেলাই করে চলে যান তিনি।
ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে যে হাসপাতালে ভর্তি করি সেখানে চিকিৎসক না থাকায় অন্য হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক ডেকে আনা হয়। সিজার করার সময় পেটে টিউমার দেখার পর তা অপসারণ করতে ৩ হাজার টাকা চান চিকিৎসক। আমি তার প্রস্তাবে রাজি হই এবং টাকা নগদ দিতে চাই। কিন্তু ভোররাতে বিকাশের দোকান বন্ধ থাকায় টাকা সংগ্রহ করতে দেরি হয়। তিনি পেটের মধ্যে টিউমার রেখেই সেলাই করে চলে যান। আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যরা তাকে বার বার অনুরোধ করি। হাসপাতালের লোকজনও তাকে অনুরোধ করেন। কিন্তু, তিনি কারও অনুরোধই রাখেননি। একজন চিকিৎসক যদি এতটা অমানবিক হন, তাহলে আমাদের মতো নিরীহ মানুষ কোথায় যাবে?’
ওই নারী বলেন, ‘আমার পেট থেকে সন্তান বের করার পর কমপক্ষে আধাঘণ্টা আমাকে সেখানে পেট কাটা অবস্থায় ফেলে রাখে। তারপর পেটে টিউমার রেখেই সেলাই করে দেয়। এই টিউমার অপসারণ করতে আবার পেট কাটতে হবে। মাত্র ৩ হাজার টাকার জন্য তিনি আমার সাথে এমন করলেন! তিনি কেমন ডাক্তার?’
হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সার্বক্ষণিক থাকলেও সার্জারির চিকিৎসক বেশি রাতে থাকেন না। এ কারণে বিভিন্ন হাসপাতালের সার্জারির চিকিৎসকদের ডেকে এনে অপারেশন করাই। যত রাতই হোক ডা. খায়রুল হাসানকে ডাকলে তিনি অজ্ঞানের চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত চলে আসেন। শুক্রবার রাতে আমার শরীরটা খারাপ থাকায় আগেভাগেই শুয়ে পড়ি। ডা. খায়রুল অপারেশন শুরু করার পর রোগীর লোকজন আমাকে ফোন করে আসতে বলেন। আমি চিকিৎসককে অনুরোধ করে বলি, রোগী টাকা না দিলে আমি তাকে টাকা দেবো। কিন্তু তিনি পেটের মধ্যে টিউমার রেখে সেলাই করে চলে যান। এটি অত্যন্ত অমানবিক। এতে আমার হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হয়েছে।’
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. খায়রুল হাসান বলেন, ‘একটি অপারেশন করতে গিয়ে আরেকটি অপারেশনের প্রয়োজন হলে তার জন্য তো বাড়তি টাকা চাইতেই পারি। টাকা চাওয়ায় তো আমার ভুল হয়নি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর আবার অজ্ঞান করা লাগতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে, এমন ভাবনা থেকেই আমি আর টিউমার অপসারণ করিনি। এটা তো খুব জরুরি না। পরেও করা যাবে।’
এ ব্যাপারে জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। এটা অত্যন্ত অমানবিক। এ ধরনের একজন-দুজন চিকিৎসকের অমানবিক আচরণের কারণে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।’