নিজস্ব প্রতিবেদক:
সর্বজনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শনিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয়।
মরদেহ শহীদ মিনারে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ, স্পিকারের পক্ষে কমোডর নাঈম রহমান শ্রদ্ধা জানান।
আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানান হাছান মাহমুদ, মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রাজ্জাকসহ প্রমুখ।
এছাড়াও শ্রদ্ধা জানান ঢাবি ভিসি ড. আকতারুজ্জামান, ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, জাসদের পক্ষে হাসানুল হক ইনু, পরিবেশ আন্দোলনের পক্ষে আবু নাসের খান, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, উপাচার্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ অনেক সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। এর মধ্যে, ১০টি শেখ হাসিনা সরকারের সময়, এটি একটি রেকর্ড।’
তিনি বলেন, ‘আমি এরকম কাজ পাগল মানুষ কমই দেখেছি। কাজে আর পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন। ছুটির দিনেও তাকে অফিস করতে দেখা যেতো। সচিবালয় বন্ধ কিন্তু আবুল মাল আবদুল মুহিতের অফিসে আলো জ্বলছে।’
সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তিনি অর্থনীতিবিদ হিসেবে সফল, অর্থমন্ত্রী হিসেবেও সফল। সবচেয়ে বড় কথা হলো এ দেশের রাজনীতিতে সৎ মানুষ খুব বেশি নেই। তিনি শতভাগ সৎ লোক ছিলেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। তিনি সারাজীবন সততার সাথে আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন, তিনি সেই দায়িত্ব সততার সাথে পালন করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত অত্যন্ত মেধাবী ও কর্মঠ ছিলেন। সেটা তিনি কাজে প্রমাণ দিয়েছেন। শেষ কয়েকদিন যাবত তিনি বারবার বলছিলেন, তিনি চলে যেতে চান। বলতেন আমার কাজ শেষ এবার আমি চলে যেতে চাই, বাকিটা তোমরা দেখো।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা এনেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আবুল মাল আবদুল মুহিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটনে ছিলেন এবং প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন।’
‘প্রবাসীদের প্রচেষ্টা না থাকলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি আন্দোলনে সম্ভব ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে জাতি গড়ার ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছেন তিনি। দান করার জন্য সবসময় মানুষকে উৎসাহিত করতেন। অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন।’
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘তিনি দেশের অর্থনীতিতে নানাভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা একজন মানুষ আবুল মাল আবদুল মুহিতকে হারানো বেদনাদায়ক। উনি যে কাজের মধ্যে ছিলেন এটা আমরা ধরে রাখতে পারলে দেশের কল্যাণ হবেই।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘তিনি আপাদমস্তক একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিকে চমৎকারভাবে সন্নিবেশ করেছিলেন। তিনি যা ভাবতেন তা বাস্তবায়ন করতে পারতেন।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের মধ্েয একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে দায়িত্ববোধ ও মানবিক গুণাবলি ছিল।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘অত্যন্ত সরল, সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ ছিলেন মুহিত সাহেব। আমলা বলি, রাজনৈতিক ব্যক্তি বলি আর মন্ত্রী বলি তিনি বিরল ব্যক্তিত্ব।’
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বহুগুণে গুণান্বিত মুহিত ভাই। আমরা একজন মেধাবী লোককে হারালাম। সাংস্কৃতিক জগতের একজন পৃষ্ঠপোষককে হারালাম।’