অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক:
পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক একে একে নিঃশেষিত হতে চলেছে। এখন এ মাসের নির্ধারিত ইবাদাতগুলো গোছানো ও ইহতিসাবের পালা। মাহে রমজানে বেশ কিছু বাধ্যতামূলক ইবাদত আমাদের ওপর এসে পড়ে। যেমন সিয়াম সাধনার শেষ দিকে দিতে হয় বাধ্যতামূলক সাদকা সাদকাতুল ফিতর।
উল্লেখ্য, রোজা ও নামাজ মুসলমানদের দৈহিক ইবাদতের অন্তর্গত, হজ হলো দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত। আর যাকাত, ফিতরা দান হলো আর্থিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। রমজানের পূর্ণতা ও সিয়াম সাধনায় তাওফিক দানের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আল্লাহর নামে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। এ মাসের ইবাদত বন্দেগিতে আমাদের অনিচ্ছাকৃত যে সব ভুলত্রুটি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ শরীয়তে ফিতরা ওয়াজিব হয়েছে।
পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের দিন সকালে যাদের কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমপরিমাণ টাকা অথবা সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সমপরিমাণ টাকা কিংবা অনাবশ্যক আসবাব পত্র থাকে এবং উক্ত ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত না হয়, তার ওপর ফিতরা দান ওয়াজিব হয়ে পড়ে।
নিজের এবং নাবালক সন্তানদের ফিতরা আদায় করতে হয়। মিসকিন, ঋণী ব্যক্তি কিংবা মুসাফিরকে ফিতরা দেয়া যায়। গরিব আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করা উত্তম। একজন প্রার্থীকে কয়েকটি ফিতরা কিংবা একজনের ফিতরা কয়েকজন মিসকিনকে দেয়া দুরস্ত আছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোন অভাবী প্রার্থীর বিশেষ উপকার ও কল্যাণের দিকটি বিবেচনায় আনা উচিত।
সদকায়ে ফিতর ঈদের নামাজের পূর্বেই আদায় করতে হয়। অবশ্য কেউ যদি এটি ঈদের দিন আদায় করতে অপরাগ হয়, পরে দিলেও আদায় হবে। আবার কেউ যদি ঈদের দিনের পূর্বেই এটি আদায় করে ঝামেলামুক্ত হতে চায় তাও দুরস্ত আছে।
২০২২ সালে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ফিতরার সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩১০ টাকা। এর কারণ হিসেবে বলা হয় গম ও আটা আধা সা’ বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রামের মূল্য ৭৫ টাকা। জব ১ সা’ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম মূল্য ২৮০ টাকা। কিসমিস ১ সা’ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম, মূল্য ১৩২০ টাকা। খেজুর ১ সা’, মূল্য ১৬৫০ টাকা এবং পনির ১ সা’, মূল্য ২৩১০ টাকা। এ ধরনের উদার মনের ফিতরা আদায়ের জন্য মন ও সামর্থকে বিবেচনায় আনা হয়েছে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা) বলেন, আমরা নবী (স) এর যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম। ১ সা’ খাদ্যদ্রব্য কিংবা ১ সা’ জব কিংবা ১ সা’ খেজুর কিংবা ১ সা’ পনির অথবা ১ সা’ কিসমিস। এ হাদিসে খেজুর ও জব ছাড়া আরও কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল।
তা হলো কিসমিস পনির এবং খাদ্যদ্রব্য। মহানবী (স) ওফাতের পর হযরত মুয়াবিয়ার শাসন আমলে অনেকে গম দ্বারাও ফিতরা দিতেন। আল্লাহ পাক আমাদের এ আর্থিক ইবাদাতেও আন্তরিক হওয়ার তাওফিক দান করুন।
বর্তমান উন্মুক্ত প্রচার মিডিয়ার যুগ। বাতাসে নানা ফেরকাবাজি প্রকাশ পায়। মুসলিম জাতিকে দলাদলি ও তর্কাতর্কি থেকে দূরে থাকতে হবে। এ শিক্ষা রমজানের, এ শিক্ষা ঈদ-উল ফিতরের এবং এ শিক্ষা নূর নবী হযরতের (স)।
সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, প্রকাশিত-৩০/০৪/২০২২