অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক:
আজ ২৭ রমজান। পবিত্র জুমাতুল বিদা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে লাইলাতুল কদরের মতো মহিমান্বিত হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রজনী আমরা অতিবাহিত করেছি। আল্লাহ ঐ রজনীর ইবাদত বন্দেগী কবুল করুন।
আর জুমাতুল বিদা মানে পবিত্র রমজান মাসের বিদায়ের বার্তাবাহী জুমা। মু’মিন মুসলমানগণ পরম আহ্লাদ ও বিশেষ মর্যাদায় পালন করে থাকেন এ দিবসটি। রমজানুল মুবারক ক্রমাগত শেষ হয়ে এলে ২টি দিবসের প্রতি তারা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। একটি হলো পবিত্র শব-ই-কদর, অপরটি জুমাতুল বিদা। আজ পবিত্র জুমাতুল বিদার ফজিলত প্রাপ্তির সময়।
এমনিতেই ইসলাম ধর্মে জুমা বা জুমা দিনের গুরুত্ব অনেক বেশি। দুনিয়ার অনেক উত্থানপতন ও ঘটনার কালসাক্ষী এটি। পৃথিবী সৃষ্টি হয় এদিনে। কিয়ামতও এদিনে সংঘটিত হবে বলে বিখ্যাত তাফসীর ‘ইবনে কাসীর’ থেকে জানা যায়। এদিনের জুমার সালাত ও খুৎবাকে গরিবের হজ বলা হয়ে থাকে ।
হাদিস শরীফে এসেছে, এদিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যাতে মানুষ যে দোয়াই করে কবুল হয়। আমরা সারাদিন পূতপবিত্র থেকে ইবাদত-বন্দেগী আন্জাম দেয়ার মাধ্যমে সে মুহূর্তটি লাভ করতে পারি।
কুরআনুল করীমের সূরাতুল জুমাআয় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন (ইয়া আইয়্যুহাল লাজিনা আমানু ইজা নুদিয়া লিস সলাতি মিইয়াওমিল জুমআ…) অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, জুমার দিনে যখন আজান দেয়া হয়, তোমরা আল্লাহর স্মরণে ত্বরা করো এবং বেচাকেনা বন্ধ রাখ। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।
রহমত, বরকত, মাহফিরাতের মাস রমজানে জুমার দিবসের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ, এ মাসের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব অন্য এগারো মাসের তুলনায় অত্যধিক।
বিশেষ করে এ মাসের সমাপনী জুমার আবেদন যে কোন জুমার তুলনায় মু’মিন মনে দাগ কাটে বেশি। এ জন্য দেখা যায়, এদিন জুমার সালাতে প্রধান প্রধান মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে; রাজপথ হয় লাখো মু’মিনের জায়নামাজ। মাহে রমজানের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে এ এক মনোমুগ্ধকর সংস্কৃতি।
পবিত্র জুমাতুল বিদার মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির পেছনে চারটি কারণ মুখ্য বলে ওলামাগণ মনে করেন। প্রথমত, এদিন পবিত্র রমজানুল মুবারককে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোর একটি হৃদয় কাড়া ঐতিহ্য রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এদিন বিভিন্ন স্থান ও পরিস্থিতিভেদে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ঘোষণা করা হয় এবং তৃতীয়ত, এদিন মসজিদে মসজিদে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের করণীয় ও কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াজ-নসিহত করা হয় আর এ দিবসের আমল, তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। চতুর্থত, এদিনকে বর্তমান বিশ^ মুসলিম আল কুদুস বা জেরুজালেমের পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস মুক্তি দিবস ঘোষণা করেছেন।
সব মিলিয়ে জুমাতুল বিদা বস্তুতই ইবাদত বন্দেগী, তওবা, ইস্তিগফারের, মাহে রমজানের বিদায়বেলায় আনুষ্ঠানিক আত্মোপলব্ধির ও বিশেষ মুনাজাতের। আমরা যেন পূর্ণ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে তা উদ্যাপন করি।
সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, প্রকাশিত-২৯/০৪/২০২২