More

    আজ ৩০তম রমজান : রমজানুল মোবারক

    অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক:

    মাহে রমজানের নাজাতের দশকও শেষ হচ্ছে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এখন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর অত্যাসন্ন। ঈদ-উল-ফিতর মানে রোজা ভাঙ্গার উৎসব। গত এক মাস ধরে সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে রোজাদার যে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে, তা থেকে উত্তীর্ণের সময় ক্রমেই ঘনিয়ে এসেছে। চতুর্দিকে তাই আজ ঈদের আমেজ সুস্পষ্ট। করোনা পরবর্তী সময়ে এবার ঈদের আনন্দ কিছুটা স্পষ্ট। মুসলিম সমাজ জীবনে ঈদ-উল-ফিতরের অবারিত আনন্দধারার তুলনা চলে না। কারণ প্রথমত, এ আনন্দ-উৎসবের আমেজ গরিবের পর্ণ কুটির হতে ধনীর বালাখানা পর্যন্ত সমানভাবে মুখরিত। শহর-নগর-গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্র এর ঢেউ বি¯ৃÍত। দ্বিতীয়ত, এ আনন্দ অতি পবিত্র ও নির্মল।

    সহিহ হাদিস শরীফ মতে, ঈদ-উল-ফিতর পূর্ববর্তী রাতও অন্যতম মহিমান্বিত ইবাদাতের রজনী। রমজানের ইফতারের সময় প্রত্যেক দিন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এক হাজার জাহান্নামিকে নরকমুক্ত করেছেন, তাদের প্রত্যেকের জন্য দোজখে যাওয়া অবধারিত ছিল।

    আর রমজান মাসের শেষ দিন যখন আসে আল্লাহ সেদিন রমজানের প্রথম থেকে ঐ দিন পর্যন্ত যত পাপীতাপীকে ক্ষমা করেছেন, তার সমসংখ্যক অপরাধীকে ক্ষমা করে দেন। (সুবহানাল্লাহ…)। তাই দেখা যায়, নেককার মানুষেরা শব-ই-কদরের মতো ঈদপূর্ব রাতেও ইবাদতে মশগুল হয়।

    সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এক দীর্ঘ হাদিসে বর্ণনা করেন- যখন ঈদ-উল-ফিতরের রাতের আগমন হয়, ঐ রাতকে পুরস্কার দানের রজনী হিসেবে অভিহিত করা হয়। যখন ঈদের সকাল নামে তখন আল্লাহ প্রতিটি দেশে ফিরিস্তা প্রেরণ করেন। তারা পথের ধারে অবস্থান নেন এবং ডাকতে থাকেন।

    তাদের আহ্বান মানুষ ও জ্বিন ব্যতীত সব মাখলুকই শুনতে পায়। তারা বলেন : ওহে উম্মতে মুহাম্মদী (স)! বের হয়ে এসো মর্যাদাবান প্রতিপালকের পানে। তিনি অধিক পরিমাণে দান করে থাকেন, মারাত্মক অপরাধও ক্ষমা করে দেন।

    বস্তুত ঈদ-উল-ফিতরের দিবস হচ্ছে পুরস্কারের দিন, আত্মোপলব্ধির দিন। সমাজ ও যুগের নানা অবক্ষয়ের ছোঁয়ায় ঈদের অনুষ্ঠানেও নানা অতিরঞ্জিত বিষয় ও বাড়াবাড়ি এসে পড়েছে। আমাদেরকে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে মহানবী (স)-এর প্রবর্তিত পবিত্র ঈদের শিক্ষা ও বরকত হতে আমরা বঞ্চিত না হই। আজকের লাগামহীন ঈদের আনন্দে আমাদের অনেকে ঈদের উপরোক্ত ধর্মীয় গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা বেমালুম ভুলে থাকি।

    Image 10000 56
    সেহরি ও ইফতারের সময়সূচী

    যার কারণে আমরা লক্ষ্য করছি, মুসলমানদের ঈদ ক্রমশ হয়ে পড়েছে নিষ্প্রাণ, উদ্দেশ্য লক্ষ্যহীন। বস্তুত রমজান যেমন সাধনার মাস, এতে সিয়াম, কিয়ামসহ কঠিন ইবাদতসমূহের মাঝামাঝি রয়েছে ইফতার সেহরির আনন্দদায়ক মুহূর্তগুলো, তেমনি ঈদ-আনন্দও কিছু বিধিনিষেধে পরিপূর্ণ, যা অনিয়মতান্ত্রিকতাকে নিরুৎসাহিত করে এক সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক দায়িত্ব-কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়।

    যেমন- এদিন আর সিয়াম নয়, আল্লাহর বিশ^ মেজবানে শরিক হওয়া। শুধু আনন্দ নয় ইবাদাত যেন ভুলে না যাই। দোয়া-দরুদে মুখরিত রাখা ঈদগাহ ও মহল্লায়। আমরা যেন ভুলে না যাই, আমরা সকলে মানুষ এবং সকলের ধমনীতে লাল লহু, সকলে এক আদমের (আ) সন্তান। আর আদম (আ) মাটির তৈরি। আদম এসেছিলেন বেহেশত থেকে আর আমাদেরকে সে বেহেশতেই ফিরে যেতে হবে।

    আজ সর্বশেষ দিনে মাহে রমজানের এ সমাপনী কলামে আমরা আল্লাহ তায়ালার সে কালোত্তীর্ণ নির্দেশনাটি স্মরণে আনতে চাই- যা সিয়ামের মাসের শিক্ষার অন্তর্গত, আমাদের ঈদ ও একতার বারতাবাহী এবং দুনিয়া আখিরাতের নাজাতের কল্যাণপদ সরল পথ। -সূরা আল মুমিন এ বলা হয়েছে :

    হে ইমানদারগণ আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত, ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতপর, আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তার অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছো। তোমরা এক অগ্নিকু-ের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদের মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজেদের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হতে পার।

    আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি। নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম। আর তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শনসমূহ আসার পরও যারা বিরোধিতা করছে- তাদের জন্য রয়েছে ভয়ঙ্কর আজাব। সেদিন বিচারকালে কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো, বস্তুত যাদের মুখ কালো হবে তাদের বলা হবে : তোমরা কি ইমান আনার পর কাফের হয়ে গিয়েছিলে? এবারে সে কুফরির বিনিময়ে আজাবের আস্বাদ গ্রহণ কর। আর যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে, তারা থাকবে রহমতের মাঝে, তাতে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।’ -(আয়াত ১০২ – ১০৭)।

    সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, প্রকাশিত-০২/০৫/২০২২

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img