কিছুদিন আগে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠন করার ঘোষণা দেন। সেখানে দেখা যায় সংগঠন’টির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনির। বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগের সে পোস্টার’টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৃহস্পতিবার রাতভর র্যাবের অভিযানে হেলেনা জাহাঙ্গীর ওরফে হেলেনা আক্তারের মালিকানাধীন জয়যাত্রা আইপি টিভির কোনো বৈধ কাগজপত্র মেলেনি।
প্রায় তিন ঘণ্টা অভিযানের পর শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ জানিয়েছেন, জয়যাত্রা টেলিভিশনের কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। যদিও সম্প্রচার চ্যানেল হিশেবে যা যা থাকা দরকার, তার সবকিছুই রয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তদন্ত করে যদি বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, কর্মী নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগটিও তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বি.টি.আর.সি কিংবা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে টেলিভিশন চ্যানেলটির নামে আলাদা মামলা হতে পারে।
আওয়ামীলীগের নামের সঙ্গে মিল রেখে ভূঁইফোড় সংগঠন ‘চাকরিজীবী লীগ’ নিয়ে সমালোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় বৃহস্পতিবার র্যাব অভিযান চালায়।
অভিযানে তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, হরিণের চামড়া, বিদেশি মুদ্রা, ওয়াকিটকি, বেশ কিছু চাকু-ছুরি সহ বিভিন্ন অবৈধ জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে।
‘চাকরিজীবী লীগ’ তৈরি করে নেতা বানানো’র ঘোষণা দিয়ে সমালোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে র্যাব।
রাত সোয়া ১২টার দিকে গুলশান-২ এর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান, সেখান থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীর’কে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে নেয়া হয়।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু হেলেনা জাহাঙ্গীরের অভিযান শেষে গুলশানের বাসার সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সেখানে গণমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘হরিণের চামড়া, বিদেশি মদ, ওয়াকিটকি, বিদেশি মুদ্রা, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বেশ কিছু ধারাল ছুরি, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ড্রোন জব্দ ও নথি উদ্ধার করা হয়েছে।’
হেলানা জাহাঙ্গীর’কে র্যাব সদর দপ্তরে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হতে পারে বলেও সেখানে গণমাধ্যমকে বলা হয়।
হেলানা জাহাঙ্গীরে বিষয়ে বিস্তারিত খুব শীঘ্রই জানানো হবে বলেও জানান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
এর আগে অভিযানের সময় হেলেনাকে মাদক ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছিল র্যাব।
হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর ভবনের ৫-বি ফ্ল্যাটে থাকেন। রাত ৮টার কিছু পরে র্যাবের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় প্রবেশ করে অভিযান শুরু করেন।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম এর আগে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযানের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় আমাদের একটি দল অভিযান করছে।’
হেলেনার আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ, ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়
কিছুদিন আগে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠন করার ঘোষণা দেন। সেখানে দেখা যায় সংগঠন’টির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনির। বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগের সে পোস্টার’টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
সে পোস্টারে লেখা হয়েছিল, বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগের জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে।
হেলেনা জাহাঙ্গীর সেসময় প্রথম দিকে গণমাধ্যম’কে জানিয়েছিলো, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
যদিও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দুই সাংগাঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম ও এস এম কামাল হোসেন গণমাধ্যম’কে জানিয়েছিলেন, এ সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
ফেসবুকে হেলেনা জাহাঙ্গীর লিখেছিলেন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় আর সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার প্রত্যাশায় বাংলাদেশের আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ।
পরে অবশ্য সংগঠনটির সঙ্গে নিজের কোন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এসময় তিনি আরও জানান, এ পদ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি।
চাকরিজীবী লীগ নিয়ে সমালোচনার মুখে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বাদ দেয়া হয় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে। আর তাকে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকেও বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানায় আওয়ামীলীগ।
চাকরিজীবী লীগের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে মিল রেখে সংগঠন পরিচালনা করছে এমন শতাধিক সংগঠনের নাম আসে। আর দলীয় প্যাডে ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছে এ সংগঠনগুলো।
সমালোচনা শুরুর পরে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খুব শিগগিরই এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই ঘোষণার পরেই র্যাব হেফাজতে নেওয়া হল লীগ থেকে বহিস্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীর’কে।