More

    আমার স্বপ্নবাজ মানুষ হয়ে উঠা

    ফারজানা রহমান, এ্যানি:

    রাজশাহী কলেজ আমার কাছে একটা স্বপ্ন,একটা কিশোরীর বেড়ে উঠার গল্পের সূচনা। একটা কলেজ কিভাবে একটা মফস্বল শহর থেকে আসা কিশোরীকে স্বপ্নবাজ হয়ে উঠতে ভূমিকা রাখে,আজ বলবো সেই গল্প।

    বাবা বাংলাদেশ রেলওয়ে চাকুরী করার সুবাদে পশ্চিম অঞ্চলের হেড কোয়ার্টার পাকশী,পাবনা থেকে আমার স্কুল ফাইনালে বসা। বাবা বেশ কিছু দিন আগেই বদলী হয়ে ফুলছড়ি, গাইবান্ধা চলে গিয়েছিলেন।

    সেখানে আবাসন সুবিধা থাকলেও সন্তানদের পড়াশোনা করানোর কোন সুযোগ না থাকায় আমাদের তার পুরাতন কাজের এলাকায় আবাসন সুবিধা থাকায় আমাদের রেখে গিয়েছিলেন। যাদের পাকশী রেলওয়ে অফিসার্স কলোনী দেখার সুযোগ হয়েছে তারা কারণটা অনুধাবন করতে পারবেন নিশ্চয়।

    তাই আমার স্কুল ফাইনাল শেষ হয়ে গেলে পুরো পরিবার নিয়ে আমাদের রাজশাহীতে আবাসন পরিবর্তন করে নেওয়া হয়। এর পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি আমাকে রাজশাহীর কোন কলেজে ভর্তি করা।

    রেজাল্ট হলো,আমি সব কটা কলেজে ফরম তোলার নম্বর পেলাম। বাসা ষষ্ঠীতলায় ছিল বলে মহিলা কলেজ একদম বাসার কাছে তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওখানে ফর্ম তুলে জমা দেওয়া হল। পাশাপাশি কি হয় এটা দেখার জন্য রাজশাহী কলেজে ফর্ম তুলে জমা করা হল।

    রাজশাহী শহরে এসে বন্ধুহীন জীবনে প্রথম পরিচয় হলো তিথির মত খুব শান্ত, ধীর স্থির একটা মেয়ের সাথে। যে কিনা আজও এভাবেই আমার মত অস্থির, অশান্ত মেয়েটাকে আগলে রাখে তার সকল অত্যাচার হাঁসি মুখে মেনে নেয়।আমি অনেক ভাগ্যবান তিথি তোর মত আমার এমন বন্ধু আছে।

    এ্যাডমিশন পরীক্ষার হলে পরিচয় হলো লিপির সাথে।ও আমাকে অনেক সহযোগিতা করলো।হয়তো ও এমন ভাবে সবাইকে গ্রহণ করে বলে ও এখন বিশেষ ভাবে দক্ষ শিশুদের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছে রাজশাহীতে। যাকে আমি পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও সমাজ বিজ্ঞান এর সহপাঠী হিসাবে পেয়েছি।

    নিউমার্কেট এর পিছনে বিরাট বড় একটা দোতলা বাসার একতলায় আমরা থাকতাম। বাড়ীটা অনেক জায়গা নিয়ে ছিল।সামনে বড় একটা দীঘি। আমাদের ফ্ল্যাটের সামনে একটা বিশাল বারান্দা ছিল।

    আমরা বোনেরা যাতে সহজে বারান্দায় বসতে পারি তাই আব্বা পুরো বারান্দায় বাঁশের জ্বালি দিয়ে আবৃত করে দিয়েছিলেন। আমরা বোনেরা তাই প্রায়ই বারান্দায় বসে আড্ডা দিতাম।

    এর মাঝে আমাদের বাড়ীর বাড়ীওলার নাতনী সুমন বাগেরহাট থেকে এলো রাজশাহীতে কলেজে ভর্তি হবে বলে। ওর সাথে সময় ভালভাবে কেটে যাচ্ছিল। সুমন বিজ্ঞানে আর আমি আর তিথি মানবিকে রাজশাহী কলেজে পরীক্ষা দিলাম।

    যেদিন রেজাল্ট হবে সেদিন বাড়ীওয়ালা চাচা নাতনীর রেজাল্ট আনতে যাওয়ার সময় আমার রোল নম্বর জানতে চাইলেন। আমিও কিছু না ভেবেই দিয়ে দিলাম। এর মধ্যে মহিলা কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছি।

    তাই তেমন টেনশন নাই। এভাবেই ভেবেছি ওখানে পড়তে হলে অনেক ভাল রেজাল্ট লাগে, আমার মত এত সাধারণ এক জন ছাত্রী কিভাবে ওখানে চ্যান্স পাবে। চাচা বাড়ী ফিরে এ্যানি কোথায় ডাক দিলেন।

    বললেন তোমার রোল নম্বর বলো, আমার এখনও মনে আছে। আমার রোল ছিল ম-৩২০ । চাচা বললেন তুমি চ্যান্স পেয়েছো। আমি খুশিতে আটখানা। আমার রাজশাহী কলেজে যাত্রা শুরু হল, সাথে নিয়ে তিথিকে। এখনও এমনই আছে আমার আর তিথির পথ চলা।

    সেই স্বপ্নবাজ হয়ে উঠা। দুজন এক সেকশনে থাকবো বলে আমরা ভর্তির লাইনে একজন বাদ দিয়ে দাঁড়ালাম। আমার রোল ৯৫ আর তিথির ছিল ৯৩।

    মজার বিষয় হলো আমাদের ঠিক পরের ৯৭ রোল ছিল যে মেয়েটির তাঁর নাম সাহিন।উচ্ছল, চঞ্চল আমার মত অস্থির একটা ভাল মেয়ে। আমি আর তিথির আলোচনা করে বিষয় নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম হুবুহু সাহিনের ও সব বিষয় এক।

    বাসা থেকে আসা তিথির সাথে। আর কলেজের পুরো সময়টা সাহিনে সাথে আড্ডাবাজি। আমাদের সবচেয়ে মজার ক্লাস ছিল পরিসংখ্যান। এই কারনেই মজার ,এই জন্য যে,এই ক্লাসে মানবিক এবং বিজ্ঞান এর সব ছাত্র-ছাত্রীদের একসাথে হতো।

    মোটে জনা বিশেক মেয়ে এই ক্লাস করতো। বাকী একশ জনের উপরে ছেলে আমাদের সাথে ক্লাস করতো। প্রায় কাগজে এ্যারোপ্লেন উড়ে আসতে দেখতাম। লক্ষ্য সামনের দিকে বসা কয়েকটি মেয়ে।

    যারা এটা করতো তাদের অনেকেই শিক্ষা বোর্ড এ স্ট্যান্ড করা। এর আগে যারা এমন ভাল রেজাল্ট করতো তাদের মনে হতো স্বপ্নের রাজপুত্র।

    দেখলাম এরা আমার মত অতি সাধারণ মানুষ কিন্তু যতই মজা করুক না কেন তাদের পড়ালেখা ঠিক মত করে বলেই তাদের রেজাল্ট এত ভাল হয়।

    আমিও ঠিক করে নিলাম যা কিছু করিনা কেন সব কিছু করতে হবে লেখাপড়া ঠিক রেখে। ওর পর থেকে চরম আড্ডা বাজি উপাধি পেলেও পড়ালেখা নিয়ে কাউকে কখনো বলতে হয়নি আমাকে। আমার জীবন গঠনের পথ পাঠ ছিল সেটা।

    এরপর বিএনসিসিতে যোগ দেওয়া। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নেতৃত্বে বিকাশের জন্য নানা কাজে যোগ দেওয়া। স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করা। নতুন বন্ধুদের পাওয়া।

    আমার মনে আছে লাকির সাথে বন্ধুত্ব বিএনসিসিতে যোগ দেওয়ার ফলে। ও মানবিক এর ছাত্রী হলেও বি সেকশনে থাকায় আমার সাথে বিএনসিসিতে আসার ফলে বন্ধুত্বের শুরু যা এখন শাখা প্রশাখা গজিয়ে অনেক দূর গড়িয়েছে।

    স্কুলে একটু আধটু খেলাধুলা করতাম। কলেজের স্পোর্টস এ ডিসকাস থ্রোতে পুরুস্কার পেয়ে গেলাম । আন্ত কলেজ স্পোর্টস হবে রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে।

    আমি আর অনু প্রথম বর্ষ থেকে দলে যুক্ত হলাম। আমাদের দলে তখনকার তুখোড় এ্যাটলেট রুনা লায়লা,সাবিনা ও হনুফা আপা ছিল। আমরা একসাথে রিলে রেস করলাম।

    রাজশাহী কলেজ চ্যাম্পিয়ন হলো রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে। সেখানে যুক্ত হল আমার ইভেন্ট ডিসকাস থ্রোতে প্রথম পুরস্কার। সেই থেকে অনুর সাথে বন্ধুত্বর শুরু,যা আজো বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে আমাকে।

    রাজশাহী কলেজ এর প্রতিটি ইটের সাথে আমার স্বপ্ন জড়িয়ে গেছে সেই ১৯৮৮ সালের আগষ্ট এর কোন একটা দিন থেকে । রাজশাহী কলেজ পড়ার সুযোগ না হলে জীবন নিয়ে এভাবে ভাবতে হয়তো পারতাম না।

    তাই সেই লাল দালান আজো আমাকে হাতছানি দেয় বারেবার। রাজশাহী কলেজ আমার স্বপ্নর সূতিকাগার। তাই শুভকামনা থাকবে রাজশাহী কলেজ এর প্রতি, আরো এভাবে বারবার শ্রেষ্ঠ হয়ে বিজয়ের ঝান্ডা উড়িয়ে চলো, আমরা থাকবো তোমার সাথে।

    লেখক: কবি, কথা সাহিত্যিক ও উন্নয়ন কর্মী

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img