নিশাত বিজয়:
মামুনুল হক সর্বশেষ ফেসবুক লাইভে তার রিসোর্ট কান্ড ও তৎপরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছেন সেটার সাথে আমি ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে একমত। তিনি সেখানে বলেছেন কোন নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকার, ধর্মীয় অধিকার হরণ করা নিন্দনীয়।
মামুনুল হকের যে টেলিফোন রেকর্ডগুলো ফাঁস হয়েছে সেগুলোও যে তারই ফোনালাপ সেটা তিনি স্বীকার করেছেন, তার এই সাহসটুকুর জন্য অভিনন্দন। তিনি তার কথপোকথন ফাঁস করার নিন্দা করেছেন। আমিও মনে করি ব্যক্তিগত কথোপকথন ফাঁস খুবই নিন্দনীয়।
কিন্তু এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, মামুনুল হক কোন একক ব্যক্তি নয়, তিনি এমন একটি গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান যারা আবার সাধারণ নাগরিকেই এসব ব্যক্তিগত অধিকার, ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ করে থাকে প্রকাশ্যে আর এর বিরোধীতাও করে ওয়াজ মাহফিলগুলোতে। তিনি যে তাদের অবস্থান থেকে সরে স্বাধীন চিন্তাধারায় অবশেষে এসেছেন সেটার জন্যে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে অতি সম্প্রীতি হেফাজতের আমীরের একটি ঘোষণা স্বরণ করিয়ে দিতে চাই, হেফাজত আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে নাস্তিকেরা থাকতে পারবে না।’
এটা ছাড়াও হেফাজতিরা, একই সাথে হেফাজতের হুজুররা বিভিন্ন মাহফিলে গিয়ে বাংলাদেশের সংগীত, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলেন আবার, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় অধিকার হরণ করেন, তাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার হরণ করেন তখন কি মনে হয় না যে সেসব তো তাদের ব্যক্তিগত, ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার, তাই নয় কি? আপনারা যখন দেশে আগুণ জ্বালিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত, ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার হরণ করবেন তখন আপনিও ভাল থাকবেন না এটাই কি স্বাভাবিক না? নগর পুড়লে কি দেবালয় রক্ষা পাই? তখন দেবালয়ও পুড়ে ছাড়খার হয়, সেজন্য আপনারাও পুড়ে ছাড়খার হচ্ছেন।
আপনি ফেসবুক লাইভে দাবী করেছেন আপনার স্ত্রীদের সাথে ফোলালাপ সত্য, সেখানে তো আপনি প্রথম স্ত্রীকে বলেছেন যে আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেননি আবার বলছেন ঝর্ণাও আপনার স্ত্রী-দুটো কথা তো সাংঘর্ষিক। এই সাংঘর্ষিক কথাকে আপনি বৈধতা দেওয়ার জন্যে ধর্মকে ঢাল করেছেন। অথচ কোরআনের সূরা আল বাকারা’র ৪২ নম্বর আয়াতে বলা আছে, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না।’ এখন আপনি যে কোরআনের বাণীকে অস্বীকার করে জাল হাদিস দিচ্ছেন কেউ যদি আপনার ফাঁসি চাই ধর্ম অবমাননার দায়ে সেক্ষেত্রে কি করবেন? কারণ আপনারাও নাস্তিকদের ফাঁসির দাবীতে জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
যদি ধরে নেই আপনার বিয়ে শরীয়ত মোতাবেক হয়েছে সেক্ষেত্রে কথা আসে আপনি বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করেননি কেন? রাষ্ট্রীয় আইনের উর্দ্ধে আপনি, ইসলাম কি কখনো বলেছে রাষ্ট্রীয় আইন মানা যাবেনা? এখন আপনার শরীয়ত সম্মত বিয়ের কথা কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য? আপনারা ওয়াজ করেন সামাজিকভাবে, পিতামাতার সম্মতি ছাড়া বিয়ে অবৈধ অথচ আপনার তথাকথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর পিতা, তার দুই ছেলে ও পরিবারের অন্যরা বলছে আপনি বিয়ে করেছেন এটা তারা জানেই না। অর্থাৎ আপনি পরিস্থিতির চাপে পড়ে এই মিথ্যা কিংবা সুবিধামতো কথা বলছেন সেটা আপনার দ্বিচারিতা থেকে প্রমাণিত।
আপনারা হেফাজতি মোল্লারা আপনাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা নিয়ে ভাবেন, এই ছাত্রদের জীবনযাপন নিয়ে ভাবেন। দেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস আপনাদের একাত্তরেও করতে দেওয়া হয়নি, ভবিষ্যতেও হবেনা। জয় বাংলা।
বি:দ্র: মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত কলামের দায়-দ্বায়িত্ব লেখকের। প্রভাতী সংবাদ কর্তৃপক্ষ কোন দায় বহন করবে না।