আ.ই.ই.ডি.সি.আর বলছে, টিকা গ্রহণকারীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেও তাদের আইসিইউ-তে কম নিতে হয়েছে এবং মৃত্যুও কম হয়েছে বলে এ গবেষণায় উঠে এসেছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের ১৯ জনকে আইসিইউ’তে নিতে হয়েছে,যেটা ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২ ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৩ জনকে আইসিইউ’তে নিতে হয়েছে, যা এক শতাংশের চেয়েও কম।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
টিকা নেওয়ার পরও কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তার শারীরিক জটিলতা এবং ঝুঁকির মাত্রা কম থাকে বলে জানা গিয়েছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায়; এবার বাংলাদেশেও এক সমীক্ষায় একই ধরনের ফল মিলেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- (আ.ই.ই.ডি.সি.আর) বলছে, কোভিড-১৯ এর দুই ডোজ টিকা যারা গ্রহণ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা, হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুঝুঁকি টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে।
যার কারণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি অবশ্যই দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সরকারের এই প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা।
চলতি বছর গত মে ও জুন মাসে দেশে যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জাতীয় তালিকা থেকে দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে ১ হাজার ৩৩৪ জনকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়। তাদের সবার বয়স ছিল ৩০ বছরের উর্ধ্বে।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৯২ জন কোনো টিকা নেননি। বাকি ৭৪২ জন অন্তত ১ ডোজ টিকা নিয়েছেন। অর্থাৎ, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ টিকা নিয়েও কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন এমন ৩০৬ জন টিকা নেওয়ার অন্তত ১৪ দিন পর কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।
এই গবেষণায় টিকা গ্রহণকারীদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির পাশাপাশি তাদের রোগের নানা গতিবিধিও পর্যালোচনা করেছে বিশেষজ্ঞ’রা।
আ.ই.ই.ডি.সি.আর বলছে, টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত জটিলতায় ভুগেছেন ১১ শতাংশ। আর ২ ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে এই হার ছিল ৪ শতাংশ।
আক্রান্তদের মধ্যে যারা আগে থেকে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা) ভুগছিলেন, তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করেছে আ.ই.ই.ডি.সি.আর।
শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতায় যারা ভোগে তাদের হারে দেখা গেছে পূর্ণ টিকা গ্রহণকারীদের তুলনায় যারা টিকা নেননি, তাদের দশ শতাংশ বেশি সংক্রমণের হার।
যারা ২ ডোজ টিকা নিয়েও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। আর যারা টিকা নেননি, তাদের মধ্যে ২৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
আর যেসকল কোভিড-১৯ রোগীরা আগে থেকেই বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছিলেন, তাদের মধ্যে টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের ১০ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। অথচ টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে এই হার ৩২ শতাংশ।
একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত টিকা নেওয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার ২ ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের থেকে ১৬ শতাংশ বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
আ.ই.ই.ডি.সি.আর বলছে, টিকা গ্রহণকারীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেও তাদের আইসিইউ-তে কম নিতে হয়েছে এবং মৃত্যুও কম হয়েছে বলে এ গবেষণায় উঠে এসেছে।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের ১৯ জনকে আইসিইউ’তে নিতে হয়েছে,যেটা ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২ ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৩ জনকে আইসিইউ’তে নিতে হয়েছে, যা এক শতাংশের চেয়েও কম।
কোভিড-১৯ এর টিকা নেননি এমন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ শতাংশ বা ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে । অন্যদিকে টিকা নিয়েছেন এমন ১ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
টিকাকেন্দ্র লম্বা লাইন
দীর্ঘদিন পরে করোনার টিকাপ্রদান শুরু হওয়ার পরে টিকাকেন্দ্রগুলো লম্বা লাইন পড়েছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে টিকাগ্রহণে ব্যাপকমাত্রায় উৎসহ দেখা গিয়েছে। সরকার চলতি মাস থেকে প্রতিমাসে দেশের এককোটি মানুষকে টিকাপ্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইউনিয়ন পর্যায়ে যেন মানুষের ভোগান্তি না হয় সেজন্য সাধারণ মানুষ টিকাকেন্দ্রে এসেই টিকা নিতে পারবে।
গণটিকাদান কর্মসূচী সফল করে সরকার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে চেষ্টা করছে।