More

    মায়ার বাঁধন

    ফারজানা রহমান,এ্যানি:

    পুঁচকো আজকে চলে যাবে। পুঁচকো মানে আমার একমাত্র বড় বোনের দুই মাস বয়সী একটি কন্যা শিশু। ওটি থেকে ওকে যখন আধুনিক পোশাক পরিহিত অতি ব্যয় বহুল হাসপাতালের পুরো প্যাকেট করা কহু কাকলিকে বেবী রেহুনুমা বলে ডেকেছিল তখন সবার আগে আমি ওর একমাত্র খালামনি পৌঁছে গিয়েছিলাম। দুহাতে ওকে বুকের মধ্যে নিয়ে আদরে আদরে ভড়িয়ে দিচ্ছিলাম।

    আমার আপুর শাশুড়ি আম্মা একটু রাজকিয় জীবন যাপনে অভ্যস্ত। সব কিছুর মধ্যে তার অনুশাসনের ছড়াছড়ি। প্রথমেই ডাক দিয়ে বসলেন রোমা হাত সেনিটাইজ করেছো? আম্মু চোখের ইশারায় নিষেধ করছেন যেন আমি বে ফাঁস কিছু না বলে ফেলি।

    অথচ আপুর শ্বশুড় আব্বা খুব মজার মানুষ। তিনি হেসে এগিয়ে এসে নাতনীকে শ্বাশুড়ি আম্মার কোলে দিয়ে বললেন ওকে আগে দোয়া করে দেও। ভদ্রলোক আপুর বিয়ের পর থেকে দেখছি কোন একটা অঘটন ঘটার আগে কোথা থেকে হাজির হয়ে যান আর সব সামলিয়ে সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে ফেলেন।

    আমার আপু সুন্দরী বললে কম বলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে তার মতো এতো সুন্দরী কোন নারী আর দুইটা ছিল কিনা সন্দেহ আছে! রাবি ক্যাম্পাসে পশ্চিম পাড়ায় মেয়েদের হলের সীমানা ছুঁয়ে কর্মকর্তাদের আবাসস্থলে আমদের বসবাস।

    আব্বু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সেকশন অফিসার হিসাবে কাজ করেন। অতি সাধারণ পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠা আমাদের। আব্বুর আদরে দুই বোন মানুষ হলেও আমি আর আমার আপু একদম আলাদা চারিত্রিক গুণাবলী নিয়ে এই পৃথিবী আলো করেছি।

    এর পেছনের গল্প আছে একটা। আমার আম্মু খুব চঞ্চল এবং কিছুটা ডানপিটে ।আব্বু আম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে সহপাঠী ছিলেন। পড়তে পড়তে প্রেম এবং পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় বিয়ে । দিন গড়িয়ে আমাদের জন্ম।

    আমি হয়েছি একদম মায়ের কপি আর আপু চলনে বলনে চেহারা দিয়েও আব্বুর ফটোকপি বললে ভুল হবে না। এ নিয়ে আমাদের পরিবারে কোন সমস্যা হয়না। বরাবর আপুর আস্করা পেয়ে আছি ডানপিটে পনা আরো বেশী করি। আর বাবা আমাকে একটু বেশী ভালবাসেন। এতে অবশ্য বড় আপু খুশি হন।

    মাঝে মাঝে আম্মু একটু শাসন করেন তবে তিনি তার বয়সে যা করতে পারিনি তাই আমাকে করতে উৎসাহিত করেন । তখন বুঝি তিনিও আমাকে চোখে হারান। তবে পুঁচকে এবাড়িতে আসার পর আমার আর কোন অবস্থান নেই। আমি নিজেও সব কিছু ওর সাথে যুক্ত করে ফেলেছি আর কি।

    আগে বিকাল হলে বন্ধুদের সাথে শামীম ভাইয়ের ইবলিস চত্বরে আড্ডা দেওয়া ছিল নিত্য কাজ। সেদিন অনেক ডাকাডাকির জ্বালায় আমি যখন শামীম ভাইয়ের চায়ের দোকানে বেঞ্চিতে বসে মনের আনন্দে পা দুলাছিলাম তখন রহমত শামীম ভাইয়ের সহকারী আমাকে সিঙ্গাড়া দিতে এসে হাসি দিয়ে বললো আফা অনেক দিন পর দেখলাম। মিষ্টি খাওয়াবেন না।? সরোজ মজা করে জানতে চাইলো কেন রে রহমত রোমা আপা কেন মিষ্টি খাওয়াবো?

    রহমত তার কিশোর চোখের আলো দিয়ে বললো আমি বুঝতে পারছি আফা বিয়া কইরা ফালাইছে তাই আগের মত আর আড্ডা মারতে আসে না। ওর কথা শুনে সবাই এক সাথে হেসে উঠলো আর রোমার কাছে মিষ্টির জন্য বায়না করলো।

    যদিও রোমা কুহু কাকলি জন্মের জন্য সবাইকে একদিন পেট ভরে খায়াবে বলে ঠিক করে রেখেছিল আগে থেকেই। এই উসিলায় সবাই সিলসিলা থেকে আনা গরম গরম পানতুয়া আর কলিজার শিঙ্গাড়া রহমতের আবদারে খেতে পারলো।

    অন্য সময় হলে সবার শেষে বাধ্য হয়ে রোমা বাড়ির পথ ধরে। আজ সন্ধ্যার পর পরই রোমা পশ্চিম পাড়ার বাসার পথ ধরলো। সেই ঢাকার হাসপাতালে থেকে রাজশাহী আনা পর্যন্ত ওদের বাসার সবার সিডিউল বদলে দিয়েছে এই পুঁচকে মানিক।

    বাবা বিকালে অনেক সময় সম বয়সীদের সাথে একটু গল্প গুজব করে তবে বাড়ি ফিরতেন । এখন অফিস শেষ সোজা কোয়ার্টারে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে দোলনায় দোল দিতে দিতে বিকালের চা নাস্তার জন্য হাক দেন।

    আম্মুর সহকারী মজিনা পর্যন্ত তার স্টার জলশা দেখা কমিয়ে দিয়েছে বাবু সোনার জন্য । সেই কুহু কাকলি কে নিতে ওর দিদাসহ অনেকেই আজ রাজশাহী তে এসেছে। আগামী কাল সকালের ফ্লাইটে ওদের বাড়ি ফিরে যাবে। মাহিদ ভাইয়া এর মাঝে একবার এসে ঘুরে গেছেন।

    তিনি বেশ কিছু দিনের জন্য অফিসের প্রশিক্ষণের জন্য জাপান যাবেন। সময় করে তার আগে আপু আর পুঁচকে সময় দিতে চান। তাই বাবা মা কে নিতে পাঠিয়েছেন। এই জন্য খুব দুঃখ প্রকাশ করে বার বার আব্বু আম্মুর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ।অসম্ভব ভদ্র আর ভাল মানুষ মাহিদ ভাই। দুটিতে স্বভাবে কিছু টা এক রকম‌ । বেশ মানিয়ে গেছে দুটিতে।

    রোমার চোখের পাতা কিছুতেই আজ এক হচ্ছে না। ও আপুর সাথে এক রুম সেই ছোট বেলা থেকেই ভাগ করে নিয়েছে। এই কয় মাস পুঁচকে ওদের সঙ্গী হয়েছে। শুধু ওর জন্য নতুন কিছু ফার্নিচার যুক্ত হয়েছে। তারমধ্যে ঐ দোলনা ।

    আগামী কাল থেকে ওটা ফাঁকা থাকবে কুহু কাকলি ওটাতে দোল খেতে খেতে আপুর গান শুনতে শুনতে ঘুমাবে না ভাবলেই ওর পৃথিবীটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।

    শুধু মাত্র এই মায়া ওকে শেষ করে দিচ্ছে। বাচ্চা গুলো এত মায়া দিয়ে কেন ছেড়ে যায় রোমা বুঝতে পারেনা। ভালোবাসার মধ্যে এত কষ্ট কেন মেনে নিতে হয় ওকে এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে ?আসলে মায়ার বাঁধন গুলো এমনই হয় ! শুধু কষ্ট দেয় । দুরে চলে যায়।

    প্রতি মুহূর্তের খবর পেতে ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook, Twitter, Linkedin এবং Instagram পেজ

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img