ফারজানা রহমান, এ্যানি:
মন যে আজকাল কেন ভাল থাকে না রাতুলের ও নিজেয় বুঝে উঠতে পারে না।কারণ একটা ছিল কিন্তু সেটাও তো ঠিক হয়ে গেছে। তবে সমস্যা কোথায় তাই নিয়ে ও চিন্তা করে কুল কিনারা করতে পারে না।
ভাল আছে ,বাবা -মা ওর সব কথা মেনে নিয়েছে । একটা ছোট খাট ব্যবসা শুরু করেছে ঠিক ওর চাওয়া মত। বাবা পুরাতন আমলের বনিদী ব্যবসায়ী। সব সময় চেয়েছেন একমাত্র ছেলে তার ব্যবসার উত্তরসূরী হবে। কিন্তু রাতুল সেটা কখনো চাইনি। তাই বাবা চাইলেও সে কখনো বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেত না। মা কত করে বুঝিয়ে ওকে পাঠাতে পারেনি। উল্টা বাবার কাছে এই জন্য বকা খেয়েছে।
কলেজ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে যাবে । সবাই মিলে ঠিক করেছে ঢাকা শহরে পাঠিয়ে নামকরা কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছেলে বিবিএ ,এমবিএ করে ফিরে এসে নতুন ধারায় বাবার ব্যবসা করবে।
পড়তে যেতে রাতুলের কোন আপত্তি নেই । আপত্তি ছিল পরের টুকুতে।কেন বাবা আবার সেই ব্যবসা ওকে দেখতে হবে । ওর দুই বোন ওর ছোট ওদের কেন ব্যবসা দেখার জন্য তৈরি করা হবে না।
মাকে বলাতে মা হেসেই খুন। কি বলিস বাবা ! ওদের স্কুল পাশ হলে ভাল ঘর আর বর দেখে বিয়ে দিতে হবে না? ওদের তো সংসার হবে । বাবার ব্যবসা দেখার ওদের সুযোগ কোথায়?
রাতুল এই বিষয়ে বরাবর ভিন্ন মত প্রকাশ করে আসছে। বড় জন রাইমা একটু লাজুক এবং বোকা কিন্তু সবার ছোট রেশমী অসম্ভব সাহসী এবং বুদ্ধিমতি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত সব পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে আসছে ।
ওকে যদি ঠিক ভাবে গাইড করা যায় তাহলে রহমান এন্ড কোঃ একদিন ও কর্ণধার হতে পারবে। ও এটা বুঝে না যে দেশে দীর্ঘ দিন ধরে নারীদের সবল পদ চারণা বিরাজ করছে সেখানে তার বাবা-মা কেন এভাবে ভাবতে পারে না?
নেত্রকোনা শহর ছেড়ে এসে রাতুল এইটুকু বুঝেছে জীবনের আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিতে হলে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। জানতে হবে শিখতে হবে। ও ভাগ্যবান যে ওর পরিবার ওর পাশে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কত কিছু করার আছে ও তা এখন নিজে দেখছে ।
একটা মানুষের জীবনে চরম কিছু ঘটে যেতে পারে এখানে এসে সেটি ভাল না মন্দ হবে তা তাকে নির্ধারিত করতে হবে। ওদের ছোট শহরে অনেক কিছুই ছিল না। চাইলেও ও ওর মন মত কিছু করতে পারতো না।
ঢাকা তাকে এক পৃথিবী সুযোগ করে দিয়েছে। দিয়েছে ঘর হতে দু’পা ছড়িয়ে পৃথিবীর মন ভরা আলো বাতাস বুক ভরে নিতে। ও রেশমীর স্কুল পাশ হয়ে গেলে ওকে ওর কাছে নিয়ে গিয়েছিল তাই।
বাসায় যথেষ্ট জায়গা আছে। মা চাইলেও ওদের মাঝে মাঝে দেখে যেতে পারতো । মাত্র তো তিন ঘন্টার যাত্রা। বাবা আসতে পারবে না কখনো তা রাতুল খুব ভাল করে জানতো।
একা জীবনের অন্যতম সঙ্গী ছিল ওর নানা রকম সুরের সাথে খেলা করা। দারুণ ভরাট গলা বলে ইতিমধ্যে ও একজন বক্তা এবং আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিতি পেয়েছিল।
সেই সূত্রে তনয়ার সাথে আলাপ । দারুণ কথা বলে। ওর কথা রাতুলের শুনতেই ইচ্ছে করে । এক সেমিস্টার নীচে পড়লেও তনয়া রাতুল কে তুমি বলে নাম ধরে ডাকে। সেটা ভালই লাগে রাতুলের ।
কাজের প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে অনেকটা সময় ওদের একত্রে কেটেছে । অথচ কখনো বলেনি দুজন দুজনকে ছেড়ে থাকতে পারবে না । মন খারাপের এটা বড় কারণ রাতুলের এত ক্ষণে তা বুঝতে পারলো । ঢাকা ছেড়ে আসার পর থেকে কোথায় যেন একটা অভাব বোধ করছিল তা ও বুঝতে পারেনি।
তাছাড়া রাইমার বিয়ে উপলক্ষে অনেক আয়োজন ছিল । বড় ভাই হিসাবে ওকে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। বোনের বিয়ের জন্য রেশমী ও ঢাকা থেকে নেত্রকোনায় ছিল। ওর সময় ছিল না বলে ও বুঝতে পারেনি।
আজ পুরো বাড়ি ফাঁকা। সবাই আয়োজন শেষ করে চলে গেছে। রাতুল ওর নিজের ঘরে একা তাই হয়তো তনয়া ওর মনের অলিগলি তে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। সত্যি তো আপনজনদের কাছে থাকলে তাদের অভাব বোঝা যায়না। তনয়া ছাড়া রাতুল কিভাবে থাকবে। তনয়া ছাড়া ওর পৃথিবীটা কিভাবে সম্পন্ন হবে ?
তাই আর না ভেবে রাতুল ওর মোবাইল ফোন নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নাম্বার কল করলো। ওপারে মিষ্টি একটা কন্ঠ উৎকণ্ঠা নিয়ে জানতে চাইলো কেমন আছো তুমি?
এত নিষ্ঠুর হলে কিভাবে ?আরো কত প্রশ্নের ঝড় উঠলো। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে রাতুলের কথা তনয়া বিমুগ্ধ হয়ে শুধু শুনতেই চাইলো। তনয়া তুমি আমার পৃথিবীর পথ চলার আলোর মিছিল হবে ?
প্রতি মুহূর্তের খবর পেতে ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook, Twitter, Linkedin এবং Instagram পেজ
লেখক:কবি, কথা সাহিত্যিক ও উন্নয়ন কর্মী