More

    অচেনা আগুন্তক

    ফারজানা রহমান, এ্যানি:

    জীবন যাপনের যখন অনেকগুলো পথ আধখোলা থাকে তখন মানুষ দিশেহারা হয়ে পরে। সেই পথে উত্তরণ বড়ই কঠিন। কেউ পারে আবার কেউ অসহায়ের মত শুধু পাক খেতে থাকে। একজন মানুষের বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় শক্তি মনোবল,আর সেটা যখন একটা দমকা হাওয়ায় এক নিমিষেই ভেঙ্গে যায় তখন আর কিছুই করার থাকে না।

    বেশ কয়দিন ধরে রানুর মধ্যে এমন একটা বোধ কাজ করছে। এত আপনজন ওকে ঘিরে আছে ওরা কি সত্যি ওর মঙ্গল চায়! সব কষ্ট , দুঃখ ভুলতে চাইলেও কি ভুলে থাকা যায়। একটা জীবন হঠাৎ করে কি নতুন মোড়ে গিয়ে মিশে? সারা বেলা ওকে একটা চিন্তা শেষ করে দিচ্ছে।

    জীবন কেন রাজা রানীর গল্পের মত হয় না। সব পরীক্ষা সব সময় কেন শুধু ওকেই দিতে হবে। ও তো জীবনে তেমন কিছু চাইনি। সাদামাটা একটা জীবন চেয়েছিল ও। সাথের মানুষের উপর নির্ভর করে ওর ছোট পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠবে। ওর চাওয়া কি খুব বেশী ছিল,সব মেয়েদের স্বপ্ন তো প্রায় এমনই হয়ে থাকে।

    পথে চলতে চলতে এই সব চিন্তা রানুর প্রতিদিনের সঙ্গী। রানু একটা অতি সাধারণ বাস্তবতা বিশ্বাসী নারী। ওর সামনে জীবনে বেঁচে থাকার অনেক গুলো রাস্তা খোলা। একটু নিজেকে গুরুত্ব দিলে হেঁসে খেলে অনায়াসে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।

    কিন্তু ও যখন ওর আপনজনদের কথা ভাবে তখন ওর বিবেক ওকে বাঁধা দেয়। আজ ঐ মানুষ গুলোর ওকে যে বড় প্রয়োজন। একটা সময় ওর প্রয়োজন ওদের জীবনে ফুরিয়ে যাবে তখন ওর কি হবে ,এটা নিয়ে ও অনেক ভেবেছে। কোন উত্তর পায়নি কখনও।

    রানু তাই স্রোতে ভেসে চলা একটা শেওলার নাম। যে জানে না তার গন্তব্য কোথায়? তাই চাইলেও সে আগের মত মন খুলে হেঁসে উঠতে পারেনা যখন তখন। এই জীবন এখন প্রায় দুর্বোধ্য মনে হয় ওর কাছে। সবায় যখন জীবন উপভোগ করে ,ওর তখন বাহুল্য মনে হয়।

    রানু কখনো এভাবে জীবন নিয়ে ভাবেনি। কখনো চাইনি ভাবতে , কিন্তু কিভাবে যে সব এলোমেলো হয়ে গেল, সে এক গল্প! রানু উচ্ছলতায় ভরা একটা নারী। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবন নিয়ে রঙ্গিন স্বপ্ন বোনা ছিল ওর প্রতিদিনের কাজ।

    আর দশটা নারী নিজেকে নিয়ে যেভাবে ভাবতে চাই, ও তাই ভাবতো সব সময়। সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল নতুন স্বপ্নের সোনার সংসারের।দিন ক্ষণ সব ঠিক ছিল। কপালে না থাকলে যা হয়!

    একটা উড়ো চিঠি এলো বাড়িতে মেয়ের বিয়ে বন্ধ করেন ,তা না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কেউ তেমন পাত্তা দিলো না। কেউ মজা করার জন্য এমনটি করেছে ভেবে আয়োজন চলতে থাকলো।

    সত্যি যেদিন রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির নীচে পরে মারা গেলেন বাবা সেদিন কেউ কেউ বলেছিল বটে এর পিছনে ঐ চিঠির কোন যোগাযোগ থাকতে পারে। কথাটা উড়িয়ে দিলেও মিথ্যা নয় প্রমানিত করার জন্যে ছেলের বাড়িতে একটা উড়ো চিঠি পৌঁছালো। এই মেয়েকে বিয়ে করালে ছেলের অবস্থাও মেয়ের বাবার মতই হবে। ছেলে পক্ষ আর এগুতে সাহস করেনি।

    সেই শুরু রানুর স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার। এর পরপরই একেরপর এক ঘটনার ঘনঘটা। মায়ের অসুস্থতা, বাড়িতে সবায় ওকে আলাদা করে দেখা। সবার মাঝে থেকেও একটা আলাদা পৃথিবীর বাসিন্দা রানু।

    অথচ যার জন্যে এই অবস্থা সেই ব্যক্তির পরিচয় এখনো ওর জানা হয়ে উঠেনি। যত বার ওর বিয়ের কথা হয়েছে তত বার এমন কোন না কোন ঘটনা ঘটেছে যে , ওর আর বিয়ে করার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে গেছে।

    পথ চলতে গিয়ে ও হঠাৎ করে পিছন ফিরে খোঁজ করার চেষ্টা করে সেই অচেনা আগুন্তককে। যে কোনদিন তার সামনে আসেনি কিন্তু প্রতি পদে বুঝিয়ে দেয় সে আছে তার পৃথিবীকে রহস্যময় করে। অথচ নিজের দাবি নিয়ে কখনো সে সামনে আসে না। বেল বাজিয়ে দূর থেকে মজা দেখা সেই অচেনা আগুন্তককে দেখার যে বড় ইচ্ছে হয় ইদানিং রানুর …

    লেখক: কবি, কথা সাহিত্যিক ও উন্নয়ন কর্মী

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img