প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক:
এরিস্টটল বলেছেন, ‘প্রতিটি নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়। কিন্তু বন্ধুত্ব যতই পুরোনো হয়, ততই উৎকৃষ্ট ও দৃঢ় হয়’ আবার এমিলি ডিকেনসন বলেছেন, ‘আমার বন্ধুরা আমার সাম্রাজ্য।’
তবে সাধারন অর্থে বন্ধুরা হলো হাত আর চোখের মতো। হাত যখন ব্যথা পায়, চোখ দিয়ে তখন জল ঝরে পড়ে। আবার চোখ দিয়ে যখন জল ঝরে পড়ে, তখন সেই ব্যথায় ব্যথাতুর হাতটি চোখের জল মোছার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। সুতরাং ব্যথা আর চোখের জলের সম্পর্ক যেমন ঘনিষ্ঠ, তেমনি বন্ধুত্বের বন্ধনও একই সুতায় গাথা।
বন্ধুত্ব হলো মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক। আত্মার শক্তিশালী বন্ধন হল বন্ধুত্ব। সমাজবিদ্যা, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, এবং দর্শনে বন্ধুত্বের শিক্ষা দেয়া হয়।
একে অন্যের সুখে-খুশিতে লাফিয়ে ওঠা; একে অন্যের দুঃখে পাশে দাঁড়ানো। মন খুলে কথা বলা, হেসে গড়াগড়ি খাওয়া আর চূড়ান্ত পাগলামি করার একমাত্র আধার এ ‘বন্ধুত্ব’।
‘এসো মিলি প্রাণের টানে’। এসএসসি-১৯৮৮.বিডি প্লাটফর্মের যথার্থ শ্লোগান। ‘বন্ধু’ শব্দটা খুব ছোট হলেও এর পরিধি এতটাই বিস্তৃত যে পরিমাপ করার সাধ্য কারো নেই।
তারপরও এক কথায় বলতে গেলে বন্ধু মানেই আত্মার টান, ভালোবাসার বন্ধন, হৃদয়ের স্পর্শ, একে অন্যের ছায়া, বড় ধরনের আস্থা ও ভরসার জায়গা। এসব কিছুই প্রমাণ করতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেগা মিলন মেলায় ছুটে এসেছিল এসএসসি-১৯৮৮.বিডি এর বন্ধুরা।
প্রাথমিক পেরিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্তরে অনেক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বের আর্বিভাব হয়। এদের মধ্যে কেউবা জীবনের তাগিদে, কেউবা উচ্চতর ডিগ্রির জন্য দেশ ছেড়ে ভিনদেশে অবস্থান করছে।
সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও মনের টানটা রয়েই গেছে। সকল ব্যস্ততার মধ্যেও যেন একই প্ল্যাটফর্মে সবাই থাকতে পারে, একে-অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারে, এ রকমই একটা মহৎ উদ্দ্যোগে তৈরি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্লাটফর্ম এসএসসি-১৯৮৮.বিডি।
সারা দেশ থেকে ১৯৮৮ সালে পাশ করা বন্ধুদের নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশ ও বিদেশের প্রথমে এই ফেসবুক প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মে এখন বন্ধুর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। উদ্দেশ্য, সারাদেশের এসএসসি ১৯৮৮ ব্যাচের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুদেরকে একটি পতাকা তলে নিয়ে আসার মহা পরিকল্পনা।
আয়োজক কমিটির আহবায়ক আরশাদ খান বলেন, নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরী করা, এই প্লাটফর্মের ব্যানারে বিভিন্ন প্রকার সামজিক কাজ করা, পিছিয়ে পড়া বন্ধুদের জন্য কাজ করা এবং বছরের অন্তত একটা দিন বৃহৎ আকারে বন্ধু মিলন মেলা করার প্রত্যয়ে এই বিশাল প্ল্যাটফর্মের জন্ম হয়েছে।
পবিত্র কোরআন ও গীতা পাঠের মাধ্যমে মেগা মিলন মেলার আনুষ্ঠানিক শুভ সুচনা হয়। এর পরে এডমিন প্যানেল এর সদস্য ও অনান্য বন্ধুদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্টানের শুভ উদ্ভোধন ঘোষনা করেন আয়োজক কমিটির আহবায়ক আরশাদ খান।
দেশের ৪১টি জেলা থেকে ১২০০ বন্ধু রেজিষ্টেশন করে এই মিলন মেলায় অংশ গ্রহন করে। ভেন্যুতে রেজিষ্ট্রেশন, সকালের নাস্তা, দুপুরের খাওয়া, বিকালের স্ন্যাক্স ও অনুষ্ঠান সূচীর প্রত্যেক টা পর্বে ছিল আন্তরিকতা ও নান্দনিকতার ছোয়া।
যা এই মেগা মিলন মেলাকে সফল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে আহবায়ক আরশাদ খানের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে এসএসসি-১৯৮৮.বিডি এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মেগা মিলন মেলার প্রস্তুতি পর্বের সবকিছু।
তিনি বলেন, ”এই মেগা মিলন মেলা ২০২২ সফল করার মাধ্যমে বন্ধুত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করতে আরো একধাপ এগিয়ে গেল এসএসসি-১৯৮৮.বিডি। আমরা সবাইকে নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাই”
অনুষ্ঠানের প্রত্যেকটি পর্বই ছিল আকর্ষনীয় এবং প্রাণবন্ত। এর মধ্যে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত, এসএসসি-১৯৮৮.বিডি এর থীম সং এর সাথে উপস্থিত সকল বন্ধুদের অংশগ্রহন, বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে বন্ধুদের এওয়ার্ড প্রদান, পিছিয়ে পড়া ও বিপদগ্রস্থ বন্ধুদের জন্য এসএসসি-১৯৮৮.বিডি এর কার্যক্রমের উপর ভিডিও প্রদর্শন, মেগা মিলন মেলার কেক কাটা, জেলা ভিত্তিক একজন বন্ধুর বক্তব্য প্রদান পর্ব, উপস্থিত বন্ধুদের অংশগ্রহণে ফান গেমস, ৫০ এর প্রতিভা শিরোনামে এ প্লাটফর্মের বন্ধুদের নিজস্ব পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র পর্ব ছিল অন্যতম।
বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে যাদেরকে এওয়ার্ড দেয়া হয়েছে-
ভিন্ন ধারার কাজের স্বীকৃতিতে তিন জন এওয়ার্ড পেয়েছে যথাক্রমে, সুমাইয়া সানজিদা শিফন, চাঁপা খন্দকার ও ইমেলদা হোসেন দীপা। করোনা কালীন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এওয়ার্ড পেয়েছে যথাক্রমে, ডা: আবন্দুর রশীদ (ঝিনাইদহ), ডা: রতন কুমার পাল (কুষ্টিয়া), ডা: শাহিন রেজা (সিরাজগঞ্জ) এবং এলিজা ইসলাম (মাগুরা)।
এসএসসি-১৯৮৮.বিডি ফেসবুক প্লাটফর্মে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে এওয়ার্ড পেয়েছে যথাক্রমে, নাহিদ আনজুম লীলা (চট্টগ্রাম) ও অসাদুজ্জামান মিঠু (যশোর)। নিবেদিত প্রাণ বন্ধুর ক্যাটাগরীকে এওয়ার্ড পেয়েছে যথাক্রমে, মাহবুব রহমান (যশোর), মোঃ শামিম হোসেস (নাটোর), রেজাউন্নবী স্যান্ডো (নওগাঁ) ও শেখ আহমেদ চিশতি (পাবনা)।
এসএসসি-১৯৮৮.বিডি এর মেগা মিলন মেলা ২০২২ এর পৃষ্ঠপোষক হিসাবে এওয়ার্ড পেয়েছে যথাক্রমে রেহানা সুলতানা রিপা (তরী), চৌধুরী গোল্ড, লস্কর গ্রুপ, পূর্বচল ভ্যালী, ইউসিবি ব্যাংক এবং হাজী রফিউদ্দীন এন্ড সন্স।
মেগা মিলন মেলা ২০২২ এর সর্বোচ্চ রেজিষ্ট্রেশনকারী জেলা হিসাবে এওয়ার্ড পেয়েছে নওগাঁ জেলা।
উপস্থিত সকল বন্ধুদের জন্য ছিল কমন উপহার মেগা মিলন মেলার টি শার্ট, একটি সুদ্শ্য স্যুভেনির ও মেগা মিলন মেলার ব্যাচ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা পর্বেও ছিল নান্দনিকতার ছাপ। প্রতিটা পর্ব পরিচালনা করেন পৃথক পৃথক দুজন বন্ধু।
অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন এ প্রজন্মের উদীয়মান শিল্পী অতনু অধিকারী ও পূনম এবং শেষে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ডিফারেন্ট টাচ।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে মেগা মিলন মেলার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান। ভবিষ্যতে ভালো কাজের পরিকল্পনা প্রনয়ন, অজস্র স্মৃতিচারন, আড্ডা, ফটোসেশন সব মিলিয়ে ২৫শে মার্চ সারাদিন সি-শেল পার্কের আকাশে বাতাসে যে প্রানের সঞ্চালন ঘটেছিল তা এই প্লাটফর্মের বন্ধুদের জন্য স্মরনীয় হয়ে থাকবে বহুদিন।
রাত ৯টায় আয়োজক কমিটির আহবায়ক আরশাদ খান মেগা মিলন মেলার সমাপ্তি ঘোষনা করেন।