নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাস করা এক লাখ বাংলাদেশি সেদেশে থাকার জন্য বৈধতা পাচ্ছেন। এসংক্রান্ত একটি সরকারি ঘোষনা এসেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগেও কয়েকদফায় অবৈধ অভিভাসিদের বৈধতা দিয়েছিল মালয়েশিয়ান সরকার। নতুন করে অনিয়মিত হয়ে পড়া এক লাখ বাংলাদেশির ভাগ্য ফিরছে মালয়েশিয়ায়।
এই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিকে বৈধ হতে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। সোমবার মালয়েশিয়ার কেবিনেট এই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এর আগে ২৩ জুন মালয়েশিয়া সরকার এক নির্দেশনায় প্রবাসীদের সুযোগের কথা জানায়। তখন সময় বেঁধে দেয়া হয় ১ জুলাই পর্যন্ত। কিন্তু করোনার কারণে এই সময়ের মধ্যে অনেক প্রবাসী সুযোগটি নিতে ব্যর্থ হন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশি।
সেসব প্রবাসীর জন্য বৈধ হওয়ার সুযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলো মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির গণমাধ্যম বেরনামা ডটকম জানায়, মালয়েশিয়ায় অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়া বিদেশি কর্মীদের চলমান বৈধকরণ কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মন্ত্রীসভার বৈঠকে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈধকরণের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অবৈধদের চলমান বৈধকরণ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে কেবিনেট সম্মত হয়েছে জানিয়ে প্রেস নোটে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের বৈধকরণের মেয়াদ বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গৃহীত মালয়েশিয়ার জাতীয় ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ।
এতে আরও বলা হয়, ১ জুলাই পর্যন্ত বৈধকরণ কর্মসূচির সময়সীমার মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩ প্রবাসী রেজিস্ট্রিভুক্ত হয়েছেন। ওই কর্মসূচীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে রেজিস্ট্রিভুক্তদের মধ্যে যারা দেশে ফিরতে আগ্রহী তাদের জেল-জরিমানা মওকুফ করা হবে। অর্থাৎ তারা বিনাবাধায় নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার সুযোগ পাবেন।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হিসাব বলছে, ১ জুলাই পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৮৯২ জন বিদেশি শ্রমিক নিজ নিজ দেশে ফেরার আবেদন জানিয়েছেন। আর বৈধ হওয়ার সুযোগ নিতে আর্জি জানিয়েছেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮৯ জন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়োগকর্তা জোটাতে পারলে এবং আবশ্যকীয় শর্তাবলী পূরণ করতে পারলে তারা কাজ করার অধিকারসহ বৈধতা পাবেন।
মালয়েশিয়ার সরকারি নোটে বলা হয়েছে, বিদেশি কর্মীদের জন্য মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত দেশটির স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য সবাহ এবং সারাওয়াকও যাতে মেনে চলে সে উদ্যোগও নেবে সরকার। তবে এ সিদ্ধান্তের আওতা বাড়ানোর বিষয়টি নির্ভর করছে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চুক্তির ওপর।
মালয়েশিয়ায় ‘সোর্স কান্ট্রি’ হিসেবে পরিচিত ১৫ দেশের নাগরিকরা বৈধকরণ কর্মসূচির সুযোগ নিতে পারবেন। যাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি বা লক্ষাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে ধরা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় অবৈধদের গ্রেফতারে লকডাউনেও অভিযান
মালয়েশিয়ায় মহামারি সংক্রমণ রোধে ১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ২ সপ্তাহের কড়া লকডাউন। চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। আর এ লকডাউনের মধ্যেই দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ বিদেশি অভিবাসীদের গ্রেফতারে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছছে।
শনিবার (২৯ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদিন। তিনি বলেন, জেআইএম জাতীয় নিবন্ধকরণ বিভাগ (এনআরডি) এবং পুলিশ বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবে। এ অভিযানে গ্রেফতারদের জন্য অতিরিক্ত আটককেন্দ্র বরাদ্দ রাখতে জেল বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় প্রাণহানি ঘটেছে ৯৮ জনের। এ পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছেন ২ হাজার ৬৫০ জন। একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ২০ জন । এ নিয়ে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন, ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন, ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৬ জন।
১ জুন থেকে শুরু হওয়া দুই সপ্তাহের কড়া লকডাউনে ৭০ হাজার আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা মোতায়েন থাকবেন। দেশজুড়ে আটশরও বেশি সড়ক অবরোধ স্থাপন করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় ৩০৯ জন অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার
মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মধ্যেই অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে মালয়েশিয়া। সোমবার (২১ জুন) ভোররাতে রাজধানী কুয়ালালামপুরের অদূরে ডেনকিলের বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন সাইট থেকে ১০২ বাংলাদেশিসহ ৩০৯ জনকে আটক করা হয়।
আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ও মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত সাড়ে ১২টা থেকে রাত ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলা অভিযানে সেলাঙ্গর প্রদেশের মুকিম, ডেংকিল এলাকার একটি কন্সট্রাকশন সাইড থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এর মধ্যে ১০২ জন বাংলাদেশি, ১৯৩ জন ইন্দোনেশিয়ার, আট জন মিয়ানমার (রোহিঙ্গা), চার জন ভিয়েতনাম, দুই জন ভারতের নাগরিক রয়েছেন। এদের মধ্যে ২৮০ জন পুরুষ এবং ২৯ জন নারী। নারীদের মধ্যে সবাই ইন্দোনেশিয়ান।
গ্রেফতারদের প্রথমে করোনা টেস্ট করা হবে, পরে সেমেনিয়াহ ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অভিবাসন বিভাগ।অভিবাসন বিভাগ বলছে, বিভিন্ন অপরাধে ২০ থেকে ৫২ বছর বয়সী এই বিদেশিদের ১৯৫৯/৬৩ এর ইমিগ্রেশন আইন এবং ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩ এর আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে গত ৬ জুন দেশটির সাইবারজায়ার একটি বিল্ডিং নির্মাণ স্থাপনা থেকে ৬২ বাংলাদেশিসহ ১৫৬ জন অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়।