নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পড়াশোনা করেছেন ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত, কাজ করতে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ার্ডবয় হিসেবে। কিন্তু এখন তিনি হয়ে গেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। নির্দিষ্ট ফিস নিয়ে নিয়মিত রোগীও দেখছেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর কাট্টলিতে চেম্বারে প্রতিদিন রোগী দেখছিলেন এই কথিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।
অবশ্য তার এখন পদবীর শেষ নেই। নামের শেষে লিখে রেখেছেন এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমডি ডিগ্রি। মানুষের কাছে তিনি নিউরোমেডিসিন, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবেও পরিচয় দিতেন।
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম (৪২) নামের ভুয়া এই চিকিৎসককে আটক করেছে চট্রগ্রাম আকবর শাহ থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে আকবরশাহ থানার কর্নেল জোন্স রোডের হাজী ইব্রাহিম ম্যানসনের কাট্টলি মেডিকেল হল থেকে তাকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন।
ওসি জহির হোসেন বলেন, দুপুরে কাট্টলি মেডিকেল হল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে খোরশেদ আলমকে আটক করা হয়েছে।
খোরশেদ নিজেকে এমবিবিএস (ডিএমসি), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউলরোলজি), ডিগ্রিধারী এবং নিউরোমেডিসিন, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিয় দিতেন।
এসব পরিচয় দিয়ে কাট্টলী মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসিতে ৬ মাস যাবৎ রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন তিনি। প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ফি হিসেবে ৫০০ টাকা করে নিতেন তিনি।
ওসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খোরশেদ জানিয়েছেন তিনি অষ্টম শ্রেণি পাস। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় হিসেবে একসময় কাজ করতেন।
তিনি আরও জানান, ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে এই খোরশেদকে ২০১৭ সালে মাগুরার একটি ভ্রাম্যমান আদালত এক বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। তার আগে ২০১৩ সালে কুমিল্লায় ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি।
খোরশেদের কাছ থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জাম, নামফলক, ভিজিটিং কার্ড, সীলমোহর ও কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।
বাগেরহাটে ডাক্তারের বিরুদ্ধে রোগীর জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ
বাগেরহাটে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রাকিবের বিরুদ্ধে রোগীর জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে রোগীকে মৃত্যমুখে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগী রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজন।
ভুক্তভোগী হালিমা বেগম (২৫) শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের বেল্লাল বেপারীর স্ত্রী।
ভুক্তভোগী ও তার আত্মীয়স্বজনের অভিযোগ, চিকিৎসায় অমনোযোগ ও অবহেলার কারণে সিজারিয়ান রোগীর জরায়ু কেটে ফেলেছেন শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মোঃ রাকিব।
জানা যায়, উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত নিউ সুন্দরবন ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে আসেন রাজৈর গ্রামের বেল্লাল বেপারীর স্ত্রী হালিমা বেগম (২৫)।
গত ২৮ জুন সেখানকার ক্লিনিকের ডাক্তার মোঃ রাকিব হালিমাকে সিজারের জন্য ভর্তি করেন। ওই দিন বিকালে সিজারকালে রোগীর জরায়ু কেটে ফেলেন ডাক্তার মোঃ রাকিব।
বর্তমানে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে রোগীর আত্মীয় স্বজন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রোগীর আত্নীয়রা।
ভুক্তভোগীর স্বামী বেল্লাল বেপারী বলেন, ‘একজন এমবিবিএস ডাক্তারের এমন অসচেতনতা ও অবহেলা মানা যায় না। জরায়ু কেটে ফেলে উপযুক্ত চিকিৎসা না দিয়ে অস্বীকার করা বড় অন্যায়।’
ভুক্তভোগী হালিমা বলেন, জরায়ু কেটে ফেলার কথা ডাক্তার আমাদের বলেননি। ৩-৪ দিন পার হওয়ার পরেও যখন রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছেনা তখন আমরা নার্সের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি।
পরে ডাক্তার রাকিব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জরায়ু আগে থেকে ফাঁটা ছিল। অথচ ভুক্তভোগীরা জানান আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে এমন কিছু পাওয়া যায়নি। এছাড়া, অপারেশনের পূর্বে ডাক্তার এমন কিছুই জানায়নি। এর আগে জরায়ুতে তার কোন ব্যাথাও ছিলনা।
ডাক্তারের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় তার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন হালিমা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাক্তার রাকিবের বিরদ্ধে রোগীকে অবহেলার অভিযোগ নতুন নয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই ডাক্তার সার্জারিতে অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও স্থানীয় নিউ সুন্দরবন ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়মিতই সিজার সহ আরো অন্যান্য অপারেশন করছেন । তার অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে দিনদিন রোগীদের নানা জটিলতার মুখোমুখী হতে হচ্ছে।
এই বিষয়ে ডাক্তার রাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবহেলার ও অসচেতনতার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “চিকিৎসা দিতে গেলে অনেক সময় ভুল ভ্রান্তি হয়। তবে উল্লেখিত রোগীর জরায়ু আগে থেকেই ফাঁটা ছিল বলে কেটে ফেলেছি।