More

    আজ ১৭তম রমজান : রমজানুল মোবারক

    অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক:

    রমজানুল মোবারকের আজ সতেরোতম দিবস। দিনটি ইসলামের ইতিহাসে বদর দিবস হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। এ যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা এবং মুসলমানদের প্রথম সামরিক বিজয়।

    মাত্র তিন শ’তেরোজন জিন্দাদিল মর্দে মুমিন সেদিন প্রতিপক্ষের এক হাজার দুশমন বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে যে অলৌকিক বিজয় অর্জন করেছিলেন, তা জগতের ইতিহাসে এক বিস্ময়কর অধ্যায়ের সূচনা করে।

    এটি ছিল দ্বিতীয় হিজরীর ঘটনা। হিজরত-উত্তর মদীনায় ইসলামের ক্রমোন্নতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং সুফিয়ানের মিথ্যা রটনায় প্রলুব্ধ হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার দুরভিসন্ধিতে মক্কার কাফিররা এ যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। ফল হয়েছে তার উল্টো। বিজয় এসেছিল মুসলমানদের ঘরে।

    ঘটনাটি ছিল এমন : কাফিরদের রণ প্রস্তুতিসহ মদীনাভিমুখে অগ্রসরমান অবস্থা জানতে পেরে আঁ হযরত (সা) যুদ্ধ-সংক্রান্ত মন্ত্রণা সভা আহ্বান করেন। বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে ৬২৪ খ্রীস্টাব্দের ১৩ মার্চ মোতাবেক ১৭ রমজান তারিখে ৩১৩ জনের একটি ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী কুরাইশ বাহিনীর মোকাবেলা করবার জন্য প্রেরিত হয়।

    বদর উপত্যকায় দুই বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। হযরত মুহাম্মদ (স) স্বয়ং য্দ্ধু পরিচালনা করে অনুপ্রেরণা দান করেন। আল-আরিসা পাহাড়ের পাদদেশে মুসলিম শিবির স্থাপিত হয় এবং এর ফলে পানির কূপগুলো তাদের তত্ত্বাবধানে আসে। আল-ওয়াকিদি বলেন, হযরত মুসলিম সৈন্য সমাবেশের জন্য এমন একটা স্থান বেছে নেন, যেখানে সূর্যোদয়ের পর যুদ্ধ শুরু হলে কোন মুসলমান সৈন্যের চোখে সূর্য কিরণে বিঘ্ন ঘটবে না। প্রথমে প্রাচীন আরব রেওয়াজ অনুসারে মল্লযুদ্ধ হয়।

    মহানবীর নির্দেশে হযরত আমীর হামজা, হযরত আলী ও আবু উবায়দা (রা) কুরাইশ পক্ষের নেতা উতবা, শায়বা ও ওয়ালিদ বিন উতবার সঙ্গে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এতে শত্রুপক্ষীয় নেতৃবৃন্দ শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও নিহত হয়। উপায়ন্তর না দেখে আবু জেহেল বিধর্মী কুরাইশ বাহিনীসহ মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

    তারা মুসলমানদের প্রচ-ভাবে আক্রমণ করতে থাকে। কিন্তু চরম প্রতিকূল অবস্থায় সংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল মুসলিম বাহিনীর মোকাবেলা করা বিধর্মী কুরাইশদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

    Image 10000 56
    হেহরি ও ইফতারের সময়সূচী

    অসামান্য রণ-নৈপুণ্য, অপূর্ব বিক্রম ও অপরিসীম নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে যুদ্ধ করে মুসলমানরা বদরের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে কাফিরদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। এ যুদ্ধে ৭০ জন কুরাইশ সৈন্য নিহত হন এবং সমসংখ্যক বন্দী হয়, অপরদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম সৈন্য শাহাদাৎ বরণ করেন। ইসলামের চির শত্রু কুখ্যাত আবু জেহেল এ যুদ্ধে নিহত হয়।

    ইসলামের প্রথম সামরিক বিজয় বদর যুদ্ধের প্রতিটি দিক ও বিভাগই যেন উম্মতে মুসলিম এবং বিশ্ব সভ্যতার ভাণ্ডারে একেকটি শিক্ষার স্বাক্ষর। সেদিন মহান পয়গাম্বরে খোদা (সা) যুদ্ধবন্দীদের প্রতি যে উদার ও মধুর আচরণ করেছেন, তা সত্যিই প্রতীকী দৃষ্টান্ত।

    ঐতিহাসিক মুইর সেদিনকার এক যুদ্ধবন্দীর জবানীতেই রসূল ও তার সাহাবীদের মহানুভবতার বিবরণ দিয়েছেন : মদীনাবাসীদের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক, তারা আমাদের উটে বা ঘোড়ায় চড়তে দিয়ে নিজেরা হেঁটে চলত।

    তারা নিজেদের সামান্য রুটিও নিজেরা না খেয়ে আমাদের খেতে দিত, নিজেরা খোরমা খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত করত।’ হযরত (সা) তাদের আহার-বস্ত্র-বাসস্থানের গ্যারান্টি দিলেন এবং মুক্তিপণের মাধ্যমে মুক্তি প্রদানের ব্যবস্থা করলেন।

    উপরন্তু যারা মুক্তিপণ দিতে অক্ষম তাদের মুসলমানদের বিরোধিতা না করার প্রতিশ্রুতিপূর্বক কিংবা মুসলমান শিশু-কিশোরদের তালিম দেয়ার অঙ্গীকারে মুক্তি দেয়া হয়।

    বস্তুত, বদর যুদ্ধ ইতিহাসে এক যুগ প্রবর্তক ঘটনা। যে সমস্ত মুসলিম বীর জঙ্গে বদরে যুদ্ধ করেছিলেন পরবর্তীকালে তারা আরও অনেক বড় বড় যুদ্ধে অংশ নেন। অনেক দেশ জয় করেন।

    কিন্তু সে সব জয়-গৌরবকে কোন মূল্য না দিয়ে বদর যুদ্ধে জড়িত থাকাকেই সৌভাগ্য বলে মনে করতেন। ইরাকের শাসনকর্তা, কুফা নগরীর স্থপতি, পারস্য বিজয়ী মহাবীর সাদ অশীতিবর্ষ বয়সে মরণশয্যায় শায়িত অবস্থায় বলেছিলেন, বদর যুদ্ধে পরিহিত বর্ম আমাকে পরিয়ে দাও, এই বেশে মরব বলে আমি এটি সযতেœ তুলে রেখেছি।’

    বাস্তবিকই বদর যুদ্ধের গুরুত্ব ও গৌরব মিথ্যে নয়। এতদিন যে ইসলাম ছিল নিরীহ, এখন তা হলো নির্ভীক এতদিন যা ছিল শান্ত, সংযত, এখন সেটা হলো দুর্বার গতিশীল। তাই তো আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কোরআনুল কারীমে বদরের বিজয়ের দিনকে মুক্তির দিবস বলে অভিহিত করেছেন।

    সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, প্রকাশিত-১৯/৪/২০২২

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img