অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক:
আজ রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজানের ৫ম দিবস। মুমিন মুসলমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি, পাপী-তাপীদের পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্তির বাণী নিয়ে পবিত্র মাস রমজানের আগমন।
যতবড় অপরাধপ্রবণ মানুষই হোক এ মাসে আল্লাহ পাকের দরবারে সবিনয় আত্মসমর্পণ ও পূর্ব অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে একই অপরাধে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে কেউ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি এ মাসে সহজেই অপরাধ মার্জনা করেন।
এ জন্য প্রয়োজন তাওবার। তাওবা মানে আল্লাহ তায়ালার কাছে অতীতের গুনাহসমূহের ব্যাপারে অনুশোচনাপূর্বক পাপ পঙ্কিলতা মুক্ত থাকার কৃতসঙ্কল্প হওয়া। জেনে শুনে তাওবা করার পর আবার গুনাহে লিপ্ত হওয়া কোন মুমিনের শান নয়।
একইভাবে গুনাহ করার পর তাওবা বিলম্ব করাও উচিত নয়। কারণ মানুষের মৃত্যুর কোন নিশ্চয়তা নেই। যে কোন সময় মৃত্যু এসে আমাদের গ্রাস করতে পারে। তাই মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকা এবং সেভাবে সতর্ক জীবন পরিচালনা করা নবীজী হযরত মুহম্মদ (স) এর সুন্নত।
তিনি বলেছেন যে ব্যক্তি কায়মনোবাক্যে তওবা করে তার কোন গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। মাহে রমজান সে সুযোগ এনে দিয়েছে পাপ তাপ সম্পর্কে অনুতপ্ত হওয়ার এবং গোটা অখ- সময়কে ইবাদতে মশগুল রাখার। মহানবী (স.) বলেছেন : এ মাসের প্রথম দশ দিন রহমত, ২য় দশ দিন মাগফিরাত এবং ৩য় দশ দিন ইতকুন মিনান নার অর্থাৎ দোজখ থেকে মুক্তির।’ – (মিশকাত)।
হাদিসে বর্ণিত আছে, একবার হুজুর (স) মসজিদে দাঁড়িয়ে সাহাবাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট এসো। অতপর তিনি প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে বললেন ‘আমিন’। এ ভাবে ২য়, ৩য় সিঁড়িতে পা রেখেও‘ আমিন’ বললেন।
ভাষণ শেষে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে নূর নবী হযরত (স) ইরশাদ করলেন এই মাত্র জিব্রাইল (আ) এসেছিলেন। আমি যখন ১ম সিঁড়িতে পা রাখি তখন জিব্রাইল (আ) বললেন, ওই ব্যক্তির ওপর অভিশাপ যে রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারেনি। আমি বললাম ‘আমিন’ অর্থাৎ তাই হোক। ২য় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিব্রাইল বললেন, অভিশাপ ওই ব্যক্তির ওপর যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়া সত্ত্বেও সে দরুদ পড়েনি। আমি বললাম ‘আমিন’। তারপর ৩য় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিব্রাইল (আ) বললেন, অভিশাপ ওই ব্যক্তির ওপর যার সামনে মাতা পিতা উভয় অথবা দুজনের একজন বার্ধক্যে পৌঁছেছেন কিন্তু সে তার সেবা করে নিজেকে বেহেস্তের যোগ্য করতে পারেনি। উত্তরে আমি বললাম ‘আমিন’ অর্থাৎ – ত্ইা যেন হয়…।
উল্লেখ্য, জিব্রাইলের (আ) বদদোয়াই কারও প্রতি আল্লাহর লানত পড়ার জন্য যথেষ্ট। যেখানে আবার মহানবী (স) এর ‘আমিন আমিন’ সম্মতিযুক্ত হয় তার পরিণতি যে কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
সুতরাং চলুন এই মাসের সদ্ব্যবহার করে আমাদের জীবনকে রাঙিয়ে তুলি। করি সিয়াম সাধনা কিয়াম সাধনা তিলাওয়াত তাহলিল আরাধনা। এ মাসে বেশি বেশি করে নবী করীম (স) এর পাক চরণে দরুদ ও সালাম প্রেরণ করব এবং পিতামাতার সেবায় আত্মনিয়োগ করব।
আর যাদের পিতামাতা ইন্তেকাল করেছেন এ মাসে মরহুমদের জন্য বেশি বেশি করে মাগফিরাত কামনা করব। বলব, রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা…। রাব্বানাগ ফিরলী ওয়ালি ওয়ালি দাইয়্যা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’ দয়াময় প্রভু! যেদিন হিসাবের দিবস অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে মাফের কাতারে রেখো, আর আমার দরদী পিতামাতা, সব মুমিনদেরও এখানে শামিল করো। এ অশ্রুুসিক্ত দুআ করার এখনই সময়।
সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, প্রকাশিত-০৭/০৪/২০২২