More

    আজ নবম রমজান : রমজানুল মোবারক

    অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক:

    পবিত্র মাহে রমজানের নবম দিবস অতিবাহিত হতে চলেছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর সুসংবাদবাহী রহমতের ১ম দশকের শেষ দিকে আমরা অবস্থান করছি। মহান আল্লাহ পাক এ পবিত্র মাসে দিনের বেলায় আমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করেছেন। আর তার মহান নবী হযরত রাসূলে কারীম (স) রাতের ভাগে আমাদের জন্য তারাবির নামাজকে সুন্নত করেছেন। তারাবি নামাজের ফজিলত ও তাৎপর্য অনেক। এটি পবিত্র মাহে রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিখ্যাত হাদিস সংকলন নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলে মাকবুল (স) ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি ইমানি প্রেরণা ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে এ মাসে রোজা রাখবে এবং নামাজ পড়বে সে ব্যক্তি গুনাহ হতে এ রূপ মুক্ত হবে যেন আজই তার জননী তাকে প্রসব করেছে।

    আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ কুদরত যে, তিনি মুসলমানদের হৃদয়ে সারাদিনের সিয়াম সাধনার পর তারাবির সালাতকেও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার জন্য অফুরন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা দান করেছেন। তারাবি নামাজের প্রতি যুগে যুগে মুসলিম জাতি যে গভীর দরদ ও প্রেমের পরিচয় দিয়ে এসেছে তার তুলনা ধর্মের ইতিহাসে মেলা ভার। এটি হলো হুব্বে দ্বীন ও হুব্বে রাসূলের পরিচয়।

    বস্তুত, বহু প্রামাণ্য হাদিস গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ (স)-এর ইমামতিতে সালাতে তারাবি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে একাধারে তিনদিন জামাতের সঙ্গে তারাবি আদায়ের পর জামাত অনুষ্ঠান থেকে তিনি বিরত হন। কেননা তার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, হয়তো এটা ফরজ করে দেয়া হবে আর উম্মতের জন্য তা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আঁ হযরতের (স) ওপর লাখো দরূদ ও সালাম, তিনি এ নামাজের গুরুত্ব ও উম্মতের সুবিধা আর কল্যাণ বিবেচনা করে একে সুন্নত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। হযরত রাসূলে কারীম (স)-এর ওফাতের মাধ্যমে যখন ওহির যুগের সমাপ্তি ঘটল, তখন সাহাবাগণ সর্বসম্মতভাবে তারাবির জামাত শুরু করলেন। বলা বাহুল্য, সালাতে তারাবির বিষয়েও তারা তাদের স্বভাবসুলভ নিষ্ঠা ও একাগ্রতার পরিচয় দিয়েছেন। তাইতো আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট।

    সাহাবা-পরবর্তী যুগের উম্মাতগণও এ ফজিলতময় ইবাদতের হিফাজত ও সংরক্ষণের বিষয়ে অত্যধিক যতœবান ছিলেন। এমনকি, এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা হকপন্থীদের বৈশিষ্ট্য ও প্রতীকরূপে স্বীকৃতি লাভ করল। আমরা যেহেতু সালফি সোয়ালিহীন তথা পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলগণের উত্তরাধিকারের গর্বিত দাবিদার, তাই আমাদের উচিত মর্যাদা বৃদ্ধিকারক সালাতুত তারাবি ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে জারি ও কায়েম রাখা।

    Image 10000 40
    সেহরি ও ইফতারের সময়সূচী

    তারাবি নামাজে কোরআন খতমের বিষয়টি এক বড় ধরনের নিয়ামক শক্তি। শীতের মৌসুমে যেমন অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে, তেমনি রমজানের আগ মুহূর্তে খতমে তারাবি পাওয়ার মানসে নগরীতে সংগঠিত হতে থাকে কোরআনে হাফিজগণ। বর্তমানে মসজিদের সংখ্যার তুলনায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে হাফিজ সাহেবদের সংখ্যা। ফলে ক্রমান্বয়ে বেকারত্বের দিকে যাচ্ছে হাফিজ সাহেবগণ। মাহে রমজানে খতম তারাবি পড়ানোর সুযোগ না পেয়ে দেদার হাফিজ হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে যান। এ ব্যধি এক সময় ধর্মীয় ও সামাজিক বিপর্যয় আনবে, কোরআন মুখস্থকরণে নিরুৎসাহিত হবেন। এ বছর আমরা বিষয়টির দিকে অনুসন্ধিৎসু মনে লক্ষ্য করলাম যে, বহু হাফেজ ঢাকা চট্টগ্রামে মসজিদে খতম তারাবি পড়ানোর সুযোগ না পেযে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমি প্রথমে হাফেজ সাহেবদের উদ্দেশে বলব, বর্তমান আধুনিক যুগ, বিজ্ঞানের যুগ, জনসংখ্যা বিস্ফোরণের যুগ। এ ক্ষেত্রে শুধু কোরআন মুখস্থ করে সারাবছর খতম তারাবিহের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। অন্যান্য হাতের কাজ আয়ত্ব করুন, তাহলে সারাবছরের হতাশা কেটে বুকভরে আশার সূর্য উদিত হবে। মাদ্রাসা-কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা নিন, ব্যবসা- বাণিজ্যে মনোযোগ দিন, অনুবাদ শিল্প, কম্পিউটার, টেলিফোন ফ্যাক্সসহ টেকনিক্যাল বিষয়সমূহ আয়ত্ত করুন।

    একই সঙ্গে মসজিদের সম্মানিত সভাপতি/সেক্রেটারি, ইমাম মুতাওয়াল্লিদের প্রতিও আমাদের একটি প্রস্তাব। এক সময় হাফেজদের সংখ্যা কম ছিল বলে মসজিদে একজন হাফেজ তারাবি পড়াতেন। এরও পূর্বে বেশিরভাগ মসজিদে কোরআনে হাফিজের দু®প্রাপ্যতায় ইমাম সাহেব নিজেই সূরা তারাবি পড়াতেন। এখন হাফেজের সংখ্যা বেড়েছে বলে প্রায় মসজিদে দুইজন হাফেজ নামাজে তারাবিতে অংশ নেন। এ সঙ্গে আমরা বলব, যেহেতু এখন হাতের কাছে বহু হাফেজ। তাই এক এক মসজিদে বড় বড় দুইজন হাফেজ রেখে তাদের সঙ্গে আরও ২/৪ জন হাফেজকে সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায় কিনা বিবেচনা করুন। তারাবি নামাজের ইমামতির জন্য একটি প্যানেল তৈরি করে দিন। এতে প্রচুর পরিমাণ হাফেজ মসজিদে আশ্রয় পাবে এবং সামান্য অনুগ্রহ অনুকম্পায় ধীরে ধীরে হতাশা কেটে উঠে জীবনের একটি লক্ষ্য স্থির করার সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে কোরআনের মর্যাদা বাড়বে, মসজিদের সুনাম হবে এবং কোরআন সংরক্ষণে একটু উৎসাহ পাবে আমাদের সন্তানগণ। আশা করি, রমজান সংস্কৃতি উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেন সমাজ উন্নয়নে, বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্নভাবে অবদান রাখতে পারি।

    সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, প্রকাশিত-১১/০৪/২০২২

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img