জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ
২০১২ সালে সৌদি আরব প্রবাসী বাদল মিয়া বিয়ে করেন সদর উপজেলার ভাদুঘর গ্রামের মিলি বেগমকে। বিয়ের মাত্র পর পাঁচ মাস পরেই প্রবাসে পাড়ি জমান বাদল। পরবর্তীতে সৌদি আরবে যাওয়ার পর জানতে পারেন তার স্ত্রী মিলি অন্তঃসত্ত্বা। এরপর ছেলে সন্তান সায়মনের জন্ম হয়।
স্ত্রী পরকীয়া করছে, তার গর্ভের সন্তান নিজের নয় এমন সন্দেহ থেকেই ছেলেকে খুন করেছেন পিতা। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের নদ্দাপাড়ায়।
নিহত সায়মান (৯)মাদরাসায় পড়াশোনা করতেন। গত ২৪ জুলাই বাড়ির পার্শবর্তী বিল সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে থেকে সায়মনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছে পুলিশ। নিজের সন্তান নয় এমন সন্দেহ থেকে ঘাস কাটার কাঁচি দিয়ে সায়মনকে গলা কেটে হত্যা করেন বাবা বাদল মিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাদল বাড়ির পার্শ্ববর্তী বিলে ঘাস কাটতে যান। এসময় সাথে করে ছেলে সায়মন ও ভাগ্নে সিয়ামকে নিয়ে যান। ঘণ্টা খানেক পর বাদল একাই বাড়ি ফিরে আসেন। বাসায় এসে দেখেন সায়মন ফেরেনি।
তখন বাদল জানায়- সায়মন তার আগেই বিল থেকে বাড়ি চলে এসেছে। চারিদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বাদল নিজেও খুঁজতে থাকেন। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বিল সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে সায়মনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। সায়মন স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র ছিল। এরপর ছেলে হত্যার দায়ে সন্দেহবশত পিতা বাদল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
নিজের ছেলেকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পিতা বাদল মিয়া। রোববার (২৫ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আনোয়ার সাদাতের আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, ২০১২ সালে সৌদি আরব প্রবাসী বাদল মিয়া বিয়ে করেন সদর উপজেলার ভাদুঘর গ্রামের মিলি বেগমকে। বিয়ের মাত্র পর পাঁচ মাস পরেই প্রবাসে পাড়ি জমান বাদল। পরবর্তীতে সৌদি আরবে যাওয়ার পর জানতে পারেন তার স্ত্রী মিলি অন্তঃসত্ত্বা। এরপর ছেলে সন্তান সায়মনের জন্ম হয়।
কিন্তু বাদলের মনে সন্দেহ তৈরী হয় যে সায়মন তার ছেলে না। তিনি সন্দেহ করেন প্রবাসে যাওয়ার পর তার স্ত্রী মিলির সঙ্গে অন্য কোনো পুরুষের পরকীয়া সম্পর্ক হয়েছে। এ সন্দেহ থেকেই তিনি তার সন্তান সায়মনকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন বাদল।
মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, সৌদি আরব থেকে নিয়মিত ছুটি নিয়ে দেশে আসা-যাওয়া করতেন বাদল। সায়মন ছাড়াও বাদলের আরও দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। ওই দুই ছেলে সন্তানের সঙ্গে প্রথম সন্তান সায়মনের বনিবনা হতো না। এ নিয়ে সন্দেহ বাড়তে থাকে, মনে আরও ক্ষোভ জমতে থাকে বাদলের ।
আগে থেকেই সায়মনকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাদল। সে অনুযায়ী শনিবার ঘাস কাটার কথা বলে সায়মনকে সাথে করে মাঠে নিয়ে যায়।ঘাস কাটা কাঁচি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেন ছেলেকে। এরপর বিলের পাশে ধান ক্ষেতে মরদেহ ফেলে রেখে বাড়ি ফেরেন।
হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে পুলিশ সায়মনের বাড়িতে যায়। এসময় তাদের কাছে বাদলের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। সেসময় তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরবর্তীতে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে বাদল হত্যাকান্ডের ঘটনা স্বিকার করেন। তিনি জানান- সন্দেহ থেকে নিজেই ছেলে সায়মনকে গলা কেটে হত্যা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন আরও বলেন, বাদলের ধারণা ছিল সায়মন তার নিজের ছেলে না। সেজন্যই ক্ষোভ থেকে তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। আদালতে সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার ও ঘটনার বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বাদলের স্ত্রী মিলি বেগম সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।