More

    আজ ১৮তম রমজান : রমজানুল মোবারক

    অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক:

    মোবারক মাহে রমজান। দেখতে না দেখতেই আমরা ২য় দশকের সমাপনী পর্যায়ে এসে পড়েছি। আল্লাহ তায়ালা করোনা দুর্যোগেও ইসলামী আদব কায়দাগুলো পালন করার কারণে বহুবিধ রোগ বালাই থেকে আমাদের নিরাপদ রেখেছেন।

    নবীজী হযরত মুহম্মদ (স) এর ওপর লাখো দরুদ ও সালাম তিনি আমাদের পাক পবিত্র জীবনের তাগিদ দিয়ে সুস্থতায় উজ্জীবিত করেছেন। বস্তুত পবিত্রতা একজন মানুষের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট অবস্থা আর অপবিত্রতা নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত অবস্থা। মানুষের কর্তব্য ও বৈশিষ্ট্যই হলো সর্বদা নিকৃষ্টতা পরিহার করে সাধ্যমতো উত্তম ও উৎকৃষ্ট অবস্থায় থাকা। যারা ভালভাবে পবিত্রতা অর্জন করেন, পবিত্র থাকেন আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেন। পরিষ্কার, পরিপাটি, নির্মল অবস্থাকে বলে পরিচ্ছন্নতা। আর বিশেষ পদ্ধতিতে অর্জিত দেহ, মন, পোশাক ও স্থান বা পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও নির্মলতাকে বলে তাহারাত বা পবিত্রতা।

    সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত আদায় করার জন্যে শরীর, পোশাক ও স্থান তথা পরিবেশ পবিত্র হওয়া অপরিহার্য। পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ভালবাসেন। যারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকে সবাই তাদের ভালবাসে। আল্লাহপাকও তাদের ভালবাসেন। কোরান মাজিদে আছে; যারা পবিত্র থাকে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন।’

    নবী করিম (স) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, পবিত্রতাই তিনি পছন্দ করেন। আল্লাহপাক আমাদের উদ্দেশে বলেন, যে ব্যক্তি ভেতরে বাইরে পবিত্রতা অর্জন করে, সে অবশ্যই সাফল্য লাভ করে।-(সূরা আ’লা-১৫)।

    আমরা নানা রকম কাজ করি আমাদের হাত, পা, শরীর ও কাপড় চোপড় ময়লা হয়, ধুলাবালি লাগে। ঘামে শরীর ভিজে যায়, দুর্গন্ধ হয়। আমরা মুখ দিয়ে খাবার খাই, দাঁতে ময়লা লাগে। দাঁত, মুখ পরিষ্কার না করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে। অকালে দাঁত পড়ে যায়। দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য অজু করার আগে দাঁত মাজতে হয়, মেসওয়াক করতে হয়। মহানবী (স) বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হলে, প্রত্যেক অজুর আগে আমি মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’

    অনেকের নখ, চুল বড় হয়। দেখতে খারাপ লাগে। নখ বড় হলে নখে নানা রকত ময়লা জমে, তা খাবারের সঙ্গে পেটে যায় এবং পেটের অসুখ হয়। নখ কেটে ছোট ও পরিষ্কার রাখতে হবে। জুমার দিন নখ কর্তন করা মুস্তাহাব।

    Image 10000 56
    হেহরি ও ইফতারের সময়সূচী

    হামিদ ইবনে আবদুর রহমান স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হুজুরে পাক (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটে, সে সুস্থ থাকে। অসুস্থ থাকলে সুস্থ হয়। বৃহস্পতিবার আছরের পরেও নখ কর্তন করার প্রতি ধর্মীয় পর্যায়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

    ওয়াকি হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণনা করেন, হুজুরপাক (স) এরশাদ করেছেন, হে আয়েশা! তুমি নখ কাটবারকালে প্রথমে মধ্যমা, তারপর কনিষ্ঠা, তারপর অনামিকা এবং সর্বশেষ তর্জনীর নখ কাটবে। নখ কাঁচি অথবা চাকু দ্বারা কাটবে। দাঁত দ্বারা নখ কাটা মাকরূহ। বর্ণিত আছে, হুজুরেপাক (স) নখ কাটার পর উহা মাটি চাপা দিয়ে রাখার হুকুম দিয়েছেন। নখ কাটার পর আঙ্গুলের মাথা ধুয়ে ফেলবে।-(গুনিয়াতুত ত্বালেবীন)।

    চুলও ঠিক করে রাখতে হবে। মহানবী (স) একবার একটি লোককে এলোমেলো চুল দেখে বললেন, এ ব্যক্তি কি চুল ঠিক করার কিছু পেল না? অনেকে শৌচাগার হতে এসে ভালভাবে পরিষ্কার হয় না। শরীর ময়লা, নোংরা থাকলে নানা রকম রোগ হয়। পায়খানা প্র¯্রাবের পর ভালভাবে হাত পরিষ্কার হতে হবে। দিনে একবার গোসল এবং পাঁচবার অজু করার মাধ্যমে দেহ পরিচ্ছন্ন হয়, পবিত্র হয়, মন ভাল থাকে, ফূর্তি লাগে ও কাজকর্মে উৎসাহ আসে।

    হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) এরশাদ করেছেন যখন কোন মু’মিন অথবা মুসলিম বান্দা ওজু করে এবং চেহারা ধোয়, (তার চেহারা থেকে) তার চোখের দ্বারা কৃত সব গুনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে দূর হয়ে যায়। যখন সে তার হাত ধোয়, তার দু’হাতে কৃত সমস্ত গুনাহ তার হাত থেকে পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে দূর হয়ে যায়। অতপর সে ব্যক্তি সমস্ত গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়-(মুসলিম)।

    উল্লেখ্য, অজু করার সময় অবশ্য পালনীয় কাজসমূহ নির্দেশ করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখম-ল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে আর গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে।-(৫:৬)। উপরোক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, অজুর ফরজ চারটি। পক্ষান্তরে, আমাদের এ বিষয়টিও জেনে রাখা ভাল, গোসলের ফরজ তিনটি: এক. কুলি করা, দুই. নাকে পানি দেয়া, তিন. সমস্ত শরীর একবার ধৌত করা। -(আলমগীরী)।

    আমরা নানা ধরনের কাজকর্ম করি। আমাদের কাপড় চোপড় ময়লা হয়। ময়লা কাপড় চোপড় পরলে শরীর খারাপ হয়। নানারকম রোগ হয়। মন ভাল লাগে না। পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহপাক বলেন, “তোমার কাপড় পবিত্র পরিচ্ছন্ন রাখ”। মহানবী (স) সবসময় পবিত্র কাপড় পরতেন। শরীর পরিষ্কার রাখার মতোই কাপড় চোপড় পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। অপবিত্র শরীরে যেমন সালাত আদায় করা যায় না, তেমনি অপবিত্র পোশাকেও সালাত আদায় করা যায় না। কেননা হুজুর (স) বলেছেন, পবিত্রতা অর্জন করা নামাজের চাবি।-(তিরমিযী)।

    আমরা অনেক সময় ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট খেলার মাঠ ইত্যাদি নোংরা রাখি, অপরিচ্ছন্ন রাখি। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলি, মলমূত্র ত্যাগ করি। এতে আমাদের পরিবেশ নোংরা হয়, নষ্ট হয়। নোংরা পরিবেশ রোগব্যাধির আধার। আমাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে। সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীর ও পোশাকের মতো জায়গা বা পরিবেশও পবিত্র হওয়া একান্ত অপরিহার্য।

    সিয়াম সাধনার পাশাপাশি আমরা যেন সর্বদা ভেতরে বাইরে পাক পবিত্রতা চর্চা করি। তাহলে সমাজের অনেক জীবাণুবাহিত রোগ থেকে আল্লাহর রহমতে আমরা নিষ্কৃতি পাব।

    সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, প্রকাশিত-২০/০৪/২০২২

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img